কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়েছে।
Published : 23 Aug 2021, 11:11 AM
সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে দিয়ে আলোচিত এই মামলার বিচার শুরু হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, শুরুতে মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় মামলার ১৫ আসামিকে একটি প্রিজন ভ্যানযোগে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পিছিয়ে যায়। পরে গত ১৬ অগাস্ট আদালত ২৩, ২৪ ও ২৫ অগাস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে।
পিপি ফরিদুল আলম জানান, প্রথম দিন সাক্ষ্যদানের জন্য আদালতে তিন জন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তবে সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে শুধু বাদীর।
“পরে ওসি প্রদীপ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও এএসআই লিটন মিয়ার আইনজীবী ছাড়া অন্য ১২ আসামির আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা করেছেন। সাক্ষীকে অন্য আইনজীবীদের জেরা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে।”
মামলার ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে তিন দিনে প্রথম দফায় ১৫ জনকে উপস্থিত থাকতে ইতিমধ্যে সমন পাঠানো হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
তবে উপস্থিত ছিলেন বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা সিনহার সঙ্গী সহিদুল ইসলাম সিফাত ও টেকনাফের মিনাবাজার এলাকার মোহাম্মদ আলী। তবে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে শুধু বাদীর।
বেলা সোয়া ১১টায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে তা চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর সাক্ষীকে জেরা করেন আইনজীবীরা।
বিকাল ৩টায় বিচারক আদালতের কার্যক্রম এক ঘণ্টার জন্য বিরতি দেন। এরপর বিকাল ৪টায় আবার বিচার কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় বিকাল ৫টায়।
আদালত থেকে বের হয়ে মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “সিনহা হত্যা ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মামলার এজাহারে যে বর্ণনা দিয়েছিলাম মূলত তা-ই আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
এখন তারই ভিত্তিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সিনহা হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে তুলে ধরা হয়েছে; তাও আদালতের কাছে উপস্থাপন করে আসামিদেরর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন।
শারমিন আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সাক্ষ্যদানের শুরু থেকেই আসামিদের আইনজীবীরা বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য নানা চেষ্টা চালিয়েছেন। তারা আদালতের কাছে ১১টি আপত্তিপত্র জমা দিলেও সাক্ষ্যদান সুষ্ঠুভাবে শুরু হয়েছে।
আইনের ব্যাখা দিয়ে আসামি ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে আসামিদের অভিযোগ গঠন এবং অভিযোগ গঠনের আদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। এতে তাদের (আসামিদের) বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে তা কিন্তু আসামিরা এখনও অবগত নন।
“গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠন করে আদেশের পর সেগুলোর নথি পেতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেগুলো (নথি) পাইনি। “
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করে।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নূরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন