সিনহা হত্যা মামলা: কোভিডে সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত

কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলা এক বছরে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আসলেও করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে গেছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2021, 01:08 PM
Updated : 31 July 2021, 01:08 PM

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম জানান, গত ২৬ থেকে ২৮ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীতে লকডাউন থাকায় তা নেওয়া যায়নি।  পরে পুনরায় দিন ঠিক করবে আদালত।।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে জেলার টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা।

এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশও একটি মামলা করে।

হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী ও শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। একপর্যায়ে পলাতক থাকা অবস্থায় টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবব ১৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। তাদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন র‌্যাব ১৫-তে দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।

গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল এ মামলার অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

পিপি ফরিদুল বলেন, সব আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করে দিয়েছিল আদালত। এতে সাক্ষী করা হয়েছে ৮৩ জনকে। করোনাভাইরাস মহামারীতে লকডাউন থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া যায়নি। পরে আদালত নতুন দিন ঠিক করবে।

ঘটনার গত এক বছরে মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “এটি আসলে অনেক বড় একটা ব্যাপার। পরিবারের সদস্য হিসেবে চাই, বিচারটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়। যেদিন মামলার রায় হবে, খুনির সাজা হবে এবং রায় যখন কার্যকর হবে, তখনই আমরা বলতে পারব যে, আমরা সন্তুষ্ট।”

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনা সে সময় পুরো দেশকে নাড়া দেয়। তদন্তকাজও হয় দ্রুত।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “এটি অনেক বড় মানের মামলা। এটা প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য দাঁড় করাতে তদন্ত কর্মকর্তাকে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। অনেক কষ্টে ৮৩ জন সাক্ষী নিয়ে মামলাটি স্বাক্ষ্য গ্রহণের জন্য অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছেন তিনি।

“আমাদের বিশ্বাস, এই খুনের বিচার অবশ্যই হবে। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখনই আদালতে মামলাটি স্বাভাবিক গতি পাবে। মামলার ৮৩ জন সাক্ষী রয়েছে। দোষ প্রমাণের জন্য সবার স্বাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এদের মধ্যে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হবে আদালতে তাদেরই সাক্ষ্য নেওয়া হবে।”

এদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগ্রপ্ত।

তিনি বলেন, “তিনি ও ন্যায় বিচার পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।”

ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ গ্রেপ্তার সব পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল—প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয় অন্য জেলায়।

আরও পড়ুন