কোটালীপাড়ায় খাল দখল করে মাছ চাষ, জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও তার ভাই। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার অন্তত দেড়’শ পরিবারকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2020, 05:31 AM
Updated : 10 Sept 2020, 05:31 AM

অভিযোগের মুখে রয়েছেন- উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের সদস্য মনোরঞ্জন জয়ধর ও তার ভাই রামশীল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ জয়ধর।

রামশীল ইউনিয়নের রাখাল চন্দ্র হালদার বলেন, “ইউপি সদস্য ও তার ভাই ইউনিয়নের খাগবাড়ি বিষ্ণু মন্দির সংলগ্ন খাগবাড়ি খাঁলের মুখের কালভার্টের নিচে মাটি, নেট, বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়েছে। খালের অপর প্রান্তে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে সাড়ে ৩’শ মিটার খাল দখল করে ৮ বছর ধরে মাছ চাষ করেছেন।

“এতে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকের বাড়ি-ঘর, বাড়ির আঙ্গিনার শাক-সবজি ডুবে যাচ্ছে। নৌ চলাচল ও পণ্যপরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। চাষাবাদে কৃষক খালের পানি ব্যাহার করে জমিতে সেচ দিতে পারছে না।”

খাগবাড়ি গ্রামের ভরত চৌধুরী (৬২)  বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি গ্রামের বিষ্ণু মন্দিরের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে একটা খাল ছিল; খালটি এই গ্রামের পশ্চিম পাশের জলাশয়ে গিয়ে মিশেছে।  এই খালে সেচ পাম্প বসিয়ে গ্রামের অনেক কৃষক বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতো; বর্ষার মৌসুমে নৌকা চলাতো। এই গ্রামের ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনোরঞ্জন জয়ধর ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে খালটি দখল করে মাছ চাষ করছে।”

তার অভিযোগ, “ওই এলাকার নিরীহ মানুষের ক্ষতি হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না। এলাকার কোন মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে তারা কারণে-অকারণে অত্যাচার নির্যাতন করে ।

ওই গ্রামের সর্বানন্দ মল্লিক বলেন,  খাগবাড়ি বিষ্ণু মন্দির থেকে জয়ধর বাড়ি পর্যন্ত ওই খালটি ছিল; মল্লিক বাড়ি পর্যন্ত নৌকা চলতো। আমরা এই খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন খালের মুখে বাঁধ দেওয়ার ফলে আমারা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। আমরা বোরো মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচও দিতে পারি না। “

এ বিষয়ে রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বালা বলেন, “খাগবাড়ি বিষ্ণু মন্দির সংলগ্ন খালের মুখে বাঁধ দিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবার মাছ চাষ করেছেন বলে আমি শুনেছি। জনস্বার্থে বাঁধটি কেটে দেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বনাথ জয়ধর খালের জায়গা নিজেদের দাবি করে বলেন, “ওই জায়গার আমাদের বৈধ কাগজপত্র আছে। তাই জায়গাটি ফেলে না রেখে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্র্ষণ করলে কোটালীপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, “সরকারি অনুমতি ছাড়া এভাবে মাছ চাষ অবৈধ। তদন্ত করে বিষয়টির ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহাসিন উদ্দীন বলেন, “বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি । দুই এক দিনে মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।”