রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নানা অপকর্মের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তার জন্মস্থান সাতক্ষীরার মানুষ।
Published : 09 Jul 2020, 01:48 AM
করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল।
এই ঘটনায় র্যাবের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ‘প্রকৃতপক্ষে একজন ধুরন্ধর, অর্থ লিপ্সু এবং পাষণ্ড’।
এই সাহেদ ফেইসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।
সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, সরকারি আমলাদের সঙ্গে নিজের অসংখ্য ছবি তিনি সেখানে দিয়ে রেখেছেন।
এদিকে বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও সাহেদের পুরনো কিছু ছবি ফেইসবুকে এখন শেয়ার করছেন অনেকে।
সাতক্ষীরার ছেলে সাহেদ স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। তার মা সাফিয়া করিম এক সময় মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
২০০৯ সালে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাহেদ দুই বছরের মাথায় ধানমণ্ডিতে এমএলএম ব্যবসা শুরু করে বহু লোকের টাকা মেরে দেন বলে অভিযোগ আছে। পরে তিনি প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা করেন রিজেন্ট গ্রুপ। হাসপাতাল ছাড়াও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসন, হোটেল ব্যবসা রয়েছে এ গ্রুপের।
সাহেদের এই কেলেংকারির পর তার জন্মস্থান সাতক্ষীরার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জেলা শহরের বাসিন্দা মুনসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাহেদ সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সাফিয়া করিম ও ব্যবসায়ী সিরাজুল করিমের ছেলে। সাহেদ বরাবরই ঢাকাতে থাকতেন।”
মাঝেমধ্যে সাতক্ষীরায় এলেও জনসম্পৃক্ততা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এসব লোক রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যবহার করলেও আসলে কোনো দলের আদর্শ-ঘোষণা-কর্মসূচির সাথে কখনও থাকে না। সরকারি দলে এ ধরনের সাহেদদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা উচিত।”
যুব মহিলা লীগের সাতক্ষীরা জেলা আহবায়ক ও পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহা দিবা খান সাথী বলেন, তিনি ৩৬ বছরের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জীবনে সাহেদকে সাতক্ষীরার কোনো দলীয় কর্মসূচিতে দেখেননি। এমনকি দলের ন্যূনতম প্রাথমিক সভ্য হিসেবেও দেখেননি।
“এই বিশাল মাপের প্রতারক মূলত সরকারি দলকে অপব্যবহারকারী। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের তল্পিবাহক, পরে আওয়ামী লীগ আমলে করেছে একই কাজ। আর প্রতারণা করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন নিয়ে যেভাবে ছিনিমিনি খেলেছে তার জন্য তার যথাযথ শাস্তি দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, “এই প্রতারক সাহেদ যা করেছে তা অপরাধসীমার চূড়ান্ত। এসব ধুরন্ধুররা যা করে তাই করেছে। এরা বিভিন্ন সময় ঢাকায় থেকে জেলার পদপদবী বাগানোর চেষ্টা, এমনকি দলের মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টার খবরও আমরা শুনেছি। তবে মানুষের জীবন নিয়ে সে যে অন্যায় করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই প্রতারক সাহেদ সাতক্ষীরায় জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও পুলিশের কাছে বিভিন্ন সময় নিজেকে বিশাল কিছু দাবি করে ফোন করত; স্বাভাবিক কাজ কর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করত।”
তিনি আরও বলেন, পুলিশ তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে এবং তার অপরাধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে মাঠে নেমেছে। তার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিষয়েও তদন্ত করবে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সাহেদ বরাবরই ঢাকাতে থাকতেন; সাতক্ষীরায় আসতেন কম। সাতক্ষীরার মানুষ তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না। মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা শহরের কামালনগরে তাদের মালিকানাধীন করিম সুপার মার্কেট বিক্রি করে সাতক্ষীরা ছেড়ে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে যান বহু আগে।