‘তুচ্ছ ঘটনার’ জেরে কক্সবাজারে এক ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা এক প্রবীণ ব্যক্তিকে বিবস্ত্রকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Published : 03 Jun 2020, 12:15 AM
মঙ্গলবার এ ধরণের একটি ভিডিও চিত্র ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সবার নজরে আসে। তবে ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায়।
এ নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম (৭২) চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার মৃত আলী মিয়ার ছেলে।
মারধরকারি যুবক আনছুর আলম (৩৫) একই এলাকার মৃত মনির উল্লাহর ছেলে। তিনি ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, বৃদ্ধ লোকটির লুঙ্গি ও গেঞ্জি টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে ফেলছে যুবকটি।
এ ঘটনায় গত ৩১ মে রাতে নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদী হয়ে আট জনকে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদী হয়ে আনছুর আলমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ মে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এরপর ঘটনাটির একটি ভিডিও চিত্র ফেইসবুকেও দেখেছেন।
তবে ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান ওসি হাবিবুর।
এজাহারে মামলার বাদী আশরাফ হোসাইন দাবি করেছেন, গত ২৪ মে ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বৃদ্ধ নুরুল আলম ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে ইজিবাইক (টমটম) যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আনছুর আলমের একদল সন্ত্রাসী তাকে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে বৃদ্ধের লুঙ্গি ও গেঞ্জি টেনে হিঁচড়ে ছিলে ফেলে। এক পর্যায়ে তাকে উলঙ্গ করে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে তারা। এ সময় ওই বৃদ্ধকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে তারা।
“এ দৃশ্যটি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজন যুবক মোবাইল ফোনে ধারণ করছিল।”
মামলার এজাহারে আরো দাবি করা হয়, "ঘটনাটি আশপাশের লোকজন প্রত্যক্ষ করলেও সন্ত্রাসী আনছুর আলমের ভয়ে কেউ বৃদ্ধ নুরুল আলমকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। পরে খবর পেয়ে বৃদ্ধের ছোট ছেলে অটোরিকশা চালক সালাহ উদ্দিন স্বজনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। "
বৃদ্ধ নুরুল আলমকে মারধর করার সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনসেট ও নগদ টাকা হামলাকারী আনছুর ছিনিয়ে নিয়েছে বলে এজাহারে দাবি করেন আশরাফ হোসাইন।
আশরাফ বলেন, তার বাবাকে অমানবিকভাবে মারধর করেছে যুবলীগ নেতা নামধারী সন্ত্রাসী আনছুর আলম। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, “তুচ্ছ ঘটনার জেরে বৃদ্ধ নুরুল আলমকে এলাকার চিহ্নিত কিছু যুবক মারধর করেছে। বিষয়টি তাকে জানানোর পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন।”
বৃদ্ধকে মারধর করার ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাইছার উদ্দিন কছির বলেন, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অমানবিক ঘটনা। ঘটনাটি শোনার পরপরই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“অভিযুক্তকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য পদসহ স্থায়ীভাবে বহিষ্কারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা যুবলীগের এ নেতা বলেন, “অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিতে নানা ছল-চাতুরির মাধ্যমে আনছুর আলম সংগঠনে অনুপ্রবেশ করেছে। তার অপকর্ম সম্পর্কে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা আগে অবহিত ছিল না।
“সম্প্রতি সে ডাকাতি, জমি জবরদখল ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপর্কমে জড়িত হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।”
এসব ঘটনার ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত আনছুর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।