দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের সূচি ওলটপালটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
Published : 06 May 2024, 09:44 PM
গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের পর ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের পথে বিভিন্ন ট্রেনের সময়সূচিতে যে গড়বড় শুরু হয়েছিল তা রয়ে গেছে তিন দিন পরও; সোমবারও কমলাপুর থেকে বেশির ভাগ ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে।
এর মধ্যে লালমনিরহাটের বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
এদিন লালমনিরহাটগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর থেকে সকাল সাড়ে আটটায় ছেড়ে ৮টা ৫৩ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। তবে সেটি বিমানবন্দরে পৌঁছেছে ৫ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট দেরি করে বেলা ২টা ৫০ মিনিটে।
এতটা না হলেও অন্য ট্রেনগুলোর সূচিতেও গড়বড় হতে দেখা গেছে। এতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ঢাকায় আসা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো দেরি করছিল। এর কিছুটা প্রভাব পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের সময়সূচিতেও পড়েছে।
“ট্রেনগুলো ঢাকায় আসছে দেরি করে। ফলে দেরিতে ছাড়ছে। তবে সময়সূচি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার নাগাদ পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি।”
গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে জয়দেবপুর স্টেশনের অদূরে উত্তরমুখী তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে ঢাকাগামী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দুর্ঘটনার পর ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এতে ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর সূচিতে বিভ্রাট দেখা দেয়।
দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এতে দুই দিকের ট্রেনেরই সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়। দুর্ঘটনার প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর ট্রেনের বগিগুলো উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত ওই পথে রেশনিং পদ্ধতিতে ট্রেন পরিচালনা করে রেলওয়ে। ফলে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চলতে পারেনি।
সোমবারও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় ট্রেন দেরিতে এসেছে। ট্রেনগুলো কমলাপুর থেকে ছেড়েছে দেরি করে।
কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সব ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে বিরতি দেয়। সোমবার বিকালে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
এরমধ্যে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের ভুগতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ছয় ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনে আসায় তাদের ভোগান্তি ছিল চরমে।
অন্য ট্রেনগুলোর মধ্যে রাজশাহীর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ২টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছাড়ে, বিমানবন্দর পৌঁছায় বেলা ৩টা ৩ মিনিটে। সোমবার সাড়ে চারটা পর্যন্ত ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশনে আসেনি। সে সময় ট্রেনের যাত্রীরা স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন।
এ ট্রেনে পাবনার বড়াল ব্রিজ যাওয়ার জন্য কলেজপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বিমানবন্দর স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন মো.শাহজাহান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মোবাইলে এসএমএস করে জেনেছি ট্রেন দেরি করবে। এজন্য দেরি করে স্টেশনেই এসেছি। ৩টার দিকে দেখি ট্রেন মাত্র কমলাপুরের দিকে যাচ্ছে।”
পরে দুই ঘণ্টা দেরি করে বিকাল ৫টায় সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন ৩টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে বেলা ৪টা ৮ মিনিটে বিমানবন্দর আসার কথা। সোমবার এই ট্রেন ৪২ মিনিট দেরি করে বেলা ৪টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দর আসে।
সোমবার পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি ট্রেনও দেরি করে ছেড়েছে।
চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর থেকে বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেলা ২টা ৭ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশনে আসার কথা। সোমবার সোয়া দুই ঘণ্টা দেরি করে বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে ওই ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে আসে।
সিলেটের কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছাড়ে, বিমানবন্দরে আসার কথা ৩টা ১৮ মিনিটে। সোয়া এক ঘণ্টা দেরি করে সোমবার বিকাল ৪টা ৩৩ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশনে আসে ট্রেনটি।
ওই ট্রেনের যাত্রী মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোয়া ৩টায় ট্রেন ছাড়বে এজন্য আড়াইটার দিকেই স্টেশনে এসে বসে আছি। কিন্তু ট্রেন আসার কোনো নাম নেই। ট্রেন যে দেরি করে আসবে সেটাও কেউ বলছে না।”