শনিবার দুপুরে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কে শ্রমিকরা ‘দু’বেলা খাদ্য সহায়তার’ দাবিতে মানববন্ধন করে এ বিক্ষোভ দেখায়।
সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটি’র ফাঁদে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশের মত কুড়িগ্রামেও বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রামে বাস-মিনিবাস শ্রমিকদের আধা ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতারা।
কুড়িগ্রাম জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সড়ক সম্পাদক মফিজুল হক বলেন, “জেলার প্রায় সাত হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছে।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন-এই লকডাউন অবস্থায় কর্মহীন সবার ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব শ্রমিকের ভাগ্যে ত্রাণ সহায়তা মেলেনি।”
সব শ্রমিককে দু’বেলা খাদ্য সহায়তার দাবিতে তারা এ মানববন্ধন বলে জানান তিনি।
ত্রাণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ইতিমধ্যে শ্রমিকদের চাহিদা মোতাবেক শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম পৌরসভার মাধ্যমে এক হাজার শ্রমিককে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলায় শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি যোগ করেন-“রাজারহাট ও রৌমারীর তালিকা হাতে পেয়েছি। এটিও খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে।
“কাজেই ত্রাণের দাবিতে আন্দোলন করা অযৌতিক।”
সরকারের ত্রাণের কোনো অভাব নেই এবং কুড়িগ্রামে যথেষ্ট মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চাহিদা পাওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে শ্রমিকরা সরকারের পাশাপাশি শ্রমিক ইউনিয়নের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
অনেক শ্রমিকের অভিযোগ, শ্রমিকদের সঠিক তালিকা প্রশাসনের কাছে দেয়নি। এছাড়া কুড়িগ্রাম শ্রমিক ইউনিয়ন কল্যাণ ফান্ডে প্রায় ৫০ লাখ টাকা জমা থাকলেও এ দুর্দিনে তা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে না।
তবে কল্যাণ ফান্ডে ৫০ লাখ টাকা জমা থাকার ‘তথ্য সঠিক নয়’ বলে দাবি করেছেন কুড়িগ্রাম মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান রাসেল।
তার দাবি, প্রায় তিন বছর আগে তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্ব নেওয়ার সময় সঞ্চয় ছিল না, বরং তখন কল্যাণ ফান্ডে শ্রমিক ইউনিয়নের ঋণ ছিল ৩০ লাখ টাকা। যা তার আমলে পরিশোধ করা হয়েছে।
এর বাইরে আরো তিন লাখ টাকা মৃত্যু দাবি ফান্ডে জমা দেওয়া হয়েছে বলছেন তিনি।
তিনি জানান, এ জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা শ্রমিকের সংখ্যা ছয় হাজার সাতশ’। যার তালিকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।
“ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মাধ্যমে ৬৬০ জন শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় গড়ে ৫০ থেকে ১০০ জন করে শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হয়।”
তবে বিপুল সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক ত্রাণ সহায়তার বাইরে থাকার বিষয়ে অভিযোগকারীদের সঙ্গে একমত তিনি।
বরং তার অভিযোগ-সরকার মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেও কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতি এখনও শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়নি।
বিষয়টি স্বীকার করে জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর বকসী জানান, বাস বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষ বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কাজেই সাংগঠনিকভাবে কোনো শ্রমিককে সহায়তা করা সম্ভব হয়নি।
তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেককে সাধ্যমত সহায়তা করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
এদিকে, পরিবহন শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ ত্রাণের জন্য নয় বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।
তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালে তিনি এবং ভারপ্রাপ্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের ক্ষোভের কথা শুনেছেন।
“তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়-ত্রাণ বঞ্চিতদের পর্যায়ক্রমে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হবে।”
শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগে শ্রমিকরা এ মানববন্ধন করেন বলছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
এ মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য এনতাজ আলী, হযরত আলী, বাবলু মিয়া।