হাওরে ধান কাটতে অন্য জেলার শ্রমিক আনার উদ্যোগ

সারাবিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিমাহমুদুর রহমান তারেক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2020, 05:50 AM
Updated : 16 April 2020, 09:15 AM

তবে প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়া অন্যান্য পেশার শ্রমিকরা ধান কাটার কাজে নামছেন। তবু সুনামগঞ্জে শ্রমিকের অভাব থাকায় প্রশাসন অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিক আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, ধান কাটার শ্রমিক আনতে ছয়-সাতটি জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। ইতোমধ্যে শ্রমিকরা আসতেও শুরু করেছেন সুনামগঞ্জে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সুনামগঞ্জে ধান কাটতে আসেন। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক আসা কমে গেছে।

তবে বোরো ধান কাটার জন্য তারা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ভোলা, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোণাসহ কয়েকটি জেলা থেকে শ্রমিক আনার জন্যর সেসব জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগযোগ করেছেন বলে তিনি জানান।

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক এসেছেন। আরও ১২ হাজারের বেশি শ্রমিক কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবেন। স্থানীয়ভাবে অন্য পেশার লোকজনও ধান কাটা শুরু করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে শ্রমিক সংকট কমে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসনও। স্থানীয় বালু শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার যেসব শ্রমিক অবরুদ্ধ দশায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের ধান কাটার আহ্বান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য পেশার শ্রমিকদের ধান কাটতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার সাবান ও বিস্কুট দেওয়া হবে। কৃষকদের সুবিধার্থে কামারশালা ও ওয়ার্কশপ খোলা রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কৃষিযন্ত্র মেরামত করা যায়।

“কৃষকদের উৎসাহ দিতে আমি নিজেও হাওরে গিয়ে ধান কাটছি।”

তিনি বলেন, যারা ক্ষেতে ধান কাটতে যাবেন তাদের সরকারি ত্রাণ দেওয়া হবে। আর যারা দূর থেকে আসবেন তাদের রাতে থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় ব্যবস্থা করা হবে।

বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দ্রুত ধান কাটতে বলা হচ্ছে জেলা প্রশাসন থেকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য জেলার শ্রমিক আনার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

তবে জেলার সির্ভিল সার্জন মো. শাসম উদ্দিন কৃষি সংশ্লিষ্ট সবাইকে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

তিনি বলেন, অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ায় জন্য বলা হয়েছে। এখন যেহেতু ধান কাটতে হবে, গুরুত্ব সহকারে সবাইকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। চলাফেরা, ধান কাটা, মাড়াইসহ সব সময় পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

এদিকে ধান কাটতে বিলম্ব হওয়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়ছেন।

ধরমপাশার উপজেলার সোনামরল হাওর এলাকার আব্দুর রশিদ বলেন, “ফলন তো ভালো হইছিল। এখন ধান কাটতে গিয়া বিপদে আছি। বেপারি (শ্রমিক) পাইতেছি না।

“সিরাজগঞ্জে বেপারির সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। কিন্তু করোনার ভয় আর গাড়ি না পাওয়ায় তারাও আসতেছে না। গত দুই দিন ধইরা মেঘও দিতাছে। ভয়ে আছি যদি বেশি মেঘ দেয় তাইলে হাওরের বাঁদ ভাইঘ্যা যাইবো।”