নারায়ণগঞ্জে ফুটপাতে হকার থাকা না থাকা ইস্যুতে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মিছিলে হামলা ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে দুই বছর পর মামলা হয়েছে।
Published : 05 Dec 2019, 09:19 PM
আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা নিয়াজুল ইসলামসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে।
এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও এক হাজার জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
গত বুধবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা খাতুনের আদালত মামলার বাদী সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তারের অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, জখম, নাশকতা, ভাংচুরসহ অরাজকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার নয় আসামি হলেন- সেদিন মিছিলে অস্ত্রসহ দেখা যাওয়া নিয়াজুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগ সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও অন্যদের নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন। সাড়ে ৪টায় পদযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে গেলে আসামিরা অত্যাধুনিক পিস্তল, রিভলবার, শটগান ও দেশি অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। মেয়রসহ সঙ্গে থাকা লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
হামলায় আইভীসহ শতাধিক আহত হন, যদের মধ্যে ৪৩ জন গুরুতর আহত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
আসামিরা সবাই নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ইন্ধন ও প্ররোচণায় ওই ঘটনা ঘটায় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আদালতে মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ঘটনার চারদিন পর ২২ জানুয়ারি সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ এজাহার গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নেয়। পরে জানা যায় মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কোনো প্রকার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সদর মডেল থানা পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার বলেন, পুলিশ এ বিষয়ে মামলা না নেওয়ায় রিট পিটিশনের পর উচ্চ আদালত মামলা রের্কড করার জন্য নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতকে নির্দেশ দেয়।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে সেলিনা হায়াৎ আইভির মিছিলে সশস্ত্র হামলায় মেয়র আইভী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ঘটনার পরদিন ১৭ জানুয়ারি মেয়র আইভীর ভাই ও সমর্থকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যা চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দেন নিয়াজুল।
ঘটনার ৫ দিন পর আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে নিয়াজুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।
পুলিশ অভিযোগ দুটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করে।
এছাড়া সদর থানার পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে পুলিশের উপর হামলা ও সরকারী কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত পরিচয় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।