তিনি বলেছেন, “ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটবে, হকারদের জন্য চারতলা বিল্ডিং হবে। তারা সেখানে যাবে। এটাই আমার মেসেজ। হকাররা হকার্স মার্কেটে যাবে।”
হকার উচ্ছেদ নিয়ে গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ শহরে সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ‘অস্ত্রের ঝনঝনানির বিপরীতে শান্তির’ জয় হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নামলে হকারদের পক্ষে নেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। হকারদের বসতে না দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
এ নিয়ে চাপা উত্তেজনার মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি বিকালে মেয়র আইভী নিজের সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে চাষাঢ়া এলাকায় গেলে সেখানে শামীম ওসমানের অনুসারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।
ওই ঘটনার সময় নিয়াজুলসহ কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। আইভীর সমর্থকদের অভিযোগ, নিয়াজ সেদিন গুলিও ছুড়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইভীর দাবি, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সেদিন হামলা চালানো হয়েছিল এবং এর পেছনে ছিলেন শামীম ওসমান।
সংঘর্ষে সময় অস্ত্র হাতে ছবি আসা নিয়াজুল ইসলাম খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সোমবার থানায় একটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দাখিল করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
আইভী বলেন, “যে সাহসী আইভীকে তারা চেয়েছিল, সাহসী নারায়ণগঞ্জবাসী আবার জেগেছে। অস্ত্রের ঝনঝনানির কাছে শান্তির যে জয়, নৈতিকতার যে জয়- তাকে কেউ হারাতে পারে না। এটা নারায়ণগঞ্জবাসী দেখিয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জ শহরকে শান্তিময় হতেই হবে- এমন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “এ বিষয়ে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমার কোনো অভিযোগ নেই। রাজনীতিতে এরকম হবেই।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও সিটি করপোরেশন গত ২৫ ডিসেম্বর ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করলে পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত ফুটপাতে বসতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে হকাররা। সাংসদ সেলিম ওসমান হকারদের পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত বিকল্প প্রস্তাব দেন সিটি করপোরেশনকে।
এরপর মানবিক দিক বিবেচনা করে সিটি করপোরেশন ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর কয়েকটি স্থানে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হকারদের বসার সুযোগ দেওয়ার কথা জানায়।
মেয়রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এই সাংসদ সেদিন বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা অনুরোধ না, নির্দেশ; নারায়ণগঞ্জের ফুটপাতে হকার বসবে।… যারা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের জবাব দিতে দুই মিনিটও লাগবে না শামীম ওসমানের।”
শামীমের ওই মন্তব্যের দিকে ইংগিত করে আইভী হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি সিটি পরিচালনা করি। আমার সিটির দায়দায়িত্ব আমার। কেউ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে এটা নিয়ে কমেন্ট করবে- সেটা আমার নগরবাসী মেনে নেবে না। অতীতে মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। আমার নগর কীভাবে চলবে সে সিদ্ধান্ত আমার নগরবাসী নেবে।”
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে আইভী বলেন, “আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী না। আমি জানি– এই কয়েক দিনে অনেক কিছু হয়েছে। আমার সঙ্গে রাজনৈতিক ও পারিবারিক কোনো বিরোধ নাই। বিরো্ধ যদি থেকে থাকে সেটা আদর্শগত, নীতিগত। কিন্তু সেখানেও আমি নমনীয়, কারণ নগরবাসীর উন্নয়ন আমি চাই।”
তবে ফুটপাতে যে হকার বসতে দেওয়া হবে না- সে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করেন তিনি।
আইভী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর নারায়ণগঞ্জের নগর ভবনের মেডিকেল অফিসার গোলাম মোস্তফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, মেয়রের রক্তচাপ কমে গেছে। পরে তার পরামর্শে আইভীকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
তাকে ল্যাবএইডে আনার পর কার্ডিওলজিস্ট বরেন চক্রবর্তীর দায়িত্বে সিসিইউতে (কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করা হয়। গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, আইভি শঙ্কামুক্ত, তবে তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে।
হাসপাতাল ছাড়ার আগে মেয়র আইভী সাংবাদিকদের বলেন, “সশস্ত্র আক্রমণ থেকে নিরস্ত্র জনগণ আমাকে রক্ষা করেছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবা দিতে চাই। আমি এখন ভালো আছি আল্লাহর রহমতে।”