আইভী-শামীম দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ নারায়ণগঞ্জে

ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 02:04 PM
Updated : 16 Jan 2018, 03:24 PM

সংঘর্ষের সময় বিকালে প্রতিপক্ষের ঢিলের মুখে পড়লেও আইভীর সমর্থকবরা ঢাল বানিয়ে তাকে রক্ষা করে।

সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা রয়েছেন।

পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে দুই পক্ষকে হটিয়ে দিলেও এখনও শহরে উত্তেজনা চলছে।

হামলার জন্য সরাসরি শামীম ওসমানকে দায়ী করেন মেয়র আইভী। অন্যদিকে শামীম ওসমানের দাবি, হকারদের বসাকে কেন্দ্র করে উসকানি দিয়ে গণ্ডগোল বাঁধানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই নেতা শামীম ও আইভীর দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। গত ২৫ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নামলে হকারদের পক্ষে নামেন শামীম।

হকারদের বসতে না দিলে আইভীকে দেখে নেওয়ার হুমকিও সোমবার দিয়েছিলেন শামীম। উচ্ছেদ হকারদের মঙ্গলবার বিকাল থেকে বসানোর ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরে এ নিয়ে চাপা উত্তেজনার মধ্যে বিকালে নগর ভবন থেকে বেরিয়ে নিজের সমর্থকদের মিছিল নিয়ে হেঁটে চাষাঢ়ায় আসেন আইভী। এই এলাকাটি ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

চাষাঢ়ার পথে আইভী

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুক্তি জেনারেল হাসপাতালের সামনে শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকাররা মেয়র সমর্থকদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। এ সময় আইভী পড়ে গেলে নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেন।

এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত থেকে চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইট ছোড়াছুড়ি। সংঘর্ষের সময় পুলিশ-সাংবাদিকসহ অনেককে আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে দেখা গেছে।

এ সময় চাষাঢ়া থেকে ২ নম্বর রেলগেইট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে হকারদের সমর্থনে শামীম পথে নেমে বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থান নেন। আর আইভী নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন।

আইভীকে বাঁচাতে সমর্থকদের মানব ঢাল

পুলিশ সুপার মঈনুল হক সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে। আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করা হবে।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুটি পক্ষ মুখোমুখি ছিল। দুপুর থেকে আমরা বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। দুই পক্ষের উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করেছে।

“আমরা চেষ্টা করেছি, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে, দুই পক্ষকে শান্ত রাখতে। আমরা পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে আনতে শটগান ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছি।”

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নগর ভবন থেকে হেঁটে চাষাঢ়া আসছিলাম প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন সম্পর্কে হকারদের সঙ্গে কথা বলতে। ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার জন্য নির্দেশ আছে। তাদের বসানোর বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বলার জন্য আসছিলাম।

“কিন্তু শামীম ওসমান কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। জেলার ডিসি ও এসপির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।”

পিস্তল হাতে ব্যক্তিটি

আইভী সমর্থকরা দাবি করেন, তাদের লক্ষ করে গুলিও ছুড়েছে শামীম সমর্থকরা। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে নিয়াজুল ইসলাম নামে একজনের নামও বলেন তারা।

মেয়র আইভী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মেয়রের অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর বলেন, “তিনি কী অভিযোগ করেছেন তা আমরা জানি না। তবে আমরা পরবর্তীতে খোঁজখবর নেব।”

শামীম ওসমান চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারসহ তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “কেউ কেউ চাচ্ছে গণ্ডগোল করে পরিস্থিতি অশান্ত করতে। নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে দেওয়া হবে না। আপনারা ধৈর্য ধরেন। কেউ যেন নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে না পারে।

শামীম ওসমান

“আমি দেখেছি অনেক বিএনপির ক্যাডার মাঠে নেমেছে। বিএনপির মার্ডার কেইসের আসামি আছে। মার্ডার কেইসের আসমির ভাইয়েরা মেয়রের পেছনে অস্ত্র নিয়ে নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। মেয়র বোকামি করতে পারে। আমি বোকা না।”

হকারদের বিষয়ে তিনি বলেন, “হকারার বসবে কি বসবে না, এটা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঠিক করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না দেওয়া পর্যন্ত হকার আছে, হকার বসবে। আপনারা যদি সাহায্য করতে চান, ওদের সঙ্গে আমি একাই পারি। দেখি কার কত সাহস আছে।

“প্রশাসনের ভূমিকা যেটা ছিল পুলিশ নিয়েছে। আমাদের যদি মাঠে নামতে হয়, এক হাজার দুই হাজার নামবে না। লাখ লাখ মানুষ মাঠে নামবে।”

গত ২৫ ডিসেম্বর নগরীর ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে জেলা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। এরপর থেকে পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত ফুটপাতে বসতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে হকাররা। এরপর মানবিক দিক বিবেচনা করে সিটি করপোরেশন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর কয়েকটি স্থানে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হকার বসার অনুমতি দেয়।