পঞ্চগড়ের সুমি আক্তারের পর এবার ভিডিও বার্তায় সৌদি আরবে নির্যাতনের কথা বলে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন হবিগঞ্জের এক গৃহবধূ।
Published : 25 Nov 2019, 09:15 PM
সৌদি আরবের নাজরান এলাকায় একটি বাড়িতে তিনি আছেন বলে স্বামীর কাছে পাঠানো ভিডিও বার্তায় বলেন।
তার স্বামী তাদের এক আত্মীয়ের সাহায্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করলে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে পঞ্চগড়ের সুমি আক্তারও সৌদি আরবের নাজরান এলাকায় নির্যাতনের শিকার হয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার এই নারী (২৪) তিন সপ্তাহ আগে সৌদি আরব যান মাসিক ২২ হাজার টাকা বেতনে।
ভিডিও বার্তায় তিনি স্বামীর উদ্দেশে বলেন, “আমার দালালে ভালা কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদি। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার উপর অত্যাচার করে। আমি বাক্কা দিন হইছে আছি।
“এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথা বলায় ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে। আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে পার আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না।
“এরা আমারে ইতা করতাছে। আমারে ভালা কামের কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পার আমারে নেও।”
এই নারী স্বামী বলেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ২০/২২ দিন আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান তার স্ত্রী। সেখানে গৃহকর্তার নির্যাতনের কথা জানিয়ে কয়েক দিন আগে তার (স্বামী) কাছে এই ভিডিও বার্তা পাঠান।
তিনি বলেন, ভিডিওটি পাওয়ার পর তিনি ‘আরব ওর্য়াল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ এজেন্সিতে গিয়ে এসব কথা বললে এজেন্সির লোকজন তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং তার স্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
এরপর কোনো উপায় না দেখে তিনি ভিডিওটি তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করান বলে জানান।
গৃহবধূর স্বামী বলেন, তার স্ত্রীর বাবার পরিবার দরিদ্র। তাই বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাবা-মাকে আর্থিক সহায়তা করার জন্য সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার স্ত্রী।
“এরপর হবিগঞ্জের শাহিন নামে একজন দালাল ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজে তাকে সৌদিতে পাঠায়। এজেন্সি থেকে বলা হয় বাসা বাড়ির কাজ করতে হবে এবং তাকে মাসে ২২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত কাজের চাপ ও গৃহকর্তার নির্যাতনে যাওয়ার পরপরই তার স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে তার স্বামী জানান।
তিনি বলেন, সৌদি যাওয়ার এক সপ্তাহ পরই নির্যাতনের কথা তাকে (স্বামী) জানান তার স্ত্রী। তিনি (স্বামী) তাকে ফিরে আসতে বলেন। কিন্তু সৌদি আরবের এজেন্সির লোকজন তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। ২ বছরের মধ্যে তাকে দেশে পাঠানো যাবে না বলে জানিয়ে দেয় এজেন্সির লোকজন।
“আমার স্ত্রী বলেছে যেখানে কাজ করে সেখান থেকে এজেন্সিতে গেলে এজেন্সির লোকজন গায়ে হাত তোলে; মারাত্মক নির্যাতন করে। এখন কী করব বুঝতেছি না।”
তিনি বলেন, “তিন মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই মাস সে নেত্রকোনায় আমার বাড়ি ছিল। সেখানে তার বাবা-মা তাকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলেন। তার বাবা-মার কথার উপর ভরসা করে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বিদেশে যাওয়ার সম্মতি দেই। এখন মনে হচ্ছে সৌদি পাঠানো ভুল হয়েছে।”
এ ব্যপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “নির্যাতনের শিকার নারী সৌদি আরবে কোন জায়গায় আছেন জেনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব।”
গত ১৫ নভেম্বর সৌদি আরবের নাজরান এলাকা থেকে দেশে ফিরে আসেন পঞ্চগড়ের সুমি আক্তার।
এ বছরের প্রথম ১০ মাসে সুমিসহ অন্তত ৯৬১ জন নারী সৌদি থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এই নারীদের বেশিরভাগই নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন তাদের নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অন্তত ৪৮ জন নারীর মৃতদেহ এসেছে দেশটি থেকে।
নারী অধিকার সংগঠনসহ বিভিন্নজনের দাবির পর গত ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদেও সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি ওঠে।
সংসদ সদস্যদের প্রশ্নে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, “গৃহকর্মীর বিষয়ে আপনারা যতটা চিন্তিত তার থেকে বেশি সরকার চিন্তিত। এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।”