নিয়োগকর্তার নির্যাতনের বিবরণ ভিডিওতে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হওয়া সুমিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় শুক্রবার। সকাল সোয়া ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছানোর পর সরকারের কর্মকর্তারা তাকে পঞ্চগড়ে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেন।
১৮ বছর বয়সী সুমি সাংবাদিকদের বলেন, “বাড়ির মালিক দীর্ঘদিন ধরে আমাকে মারধর করতেন, নানাভাবে নির্যাতন করতেন এবং হাতের মধ্যে গরম তেল ঢেলে দেন। পরে কান্নাকাটি করায় আমাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।
“আমি যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন রিয়াদের সেই বাড়ির মালিক ইয়েমেন সীমান্তের নাজরান এলাকায় আরেক ব্যক্তির কাছে আমাকে ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেন। সেখানেও আমার ওপর নির্যাতন শুরু হয়।”
এ সময় তার মোবাইল ফোন মালিক নিজের কাছে রেখে দেন বলে সুমি জানান।
পরে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম সেই ভিডিও সাংবাদিকদের দিলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সরকার সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে সুমিকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে।
সুমি বলেন, বাবার অভাবের সংসারে দুই বছর আগে তিনি ঢাকায় গিয়ে তার মামার মাধ্যমে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। পরে আশুলিয়ার চারাবাগের নূরুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
“স্বামীর প্ররোচনাতেই আমি লোভে পড়ে বিদেশে যাই। ভালো কাজের ও ভালো বেতনের কথা বলে আমাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৩০ মে স্বামী নুরুল আমাকে রূপসী বাংলা ওভারসিজের মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরব পাঠান।”
সুমি চার সন্তানের মধ্যে সবার বড়।
“বিয়ে বা বিদেশে যাওয়ার কথা আমরা পরে শুনি। বিদেশে যাওয়ার ১৫-২০ দিন পর সে আমাদের সঙ্গে কথা বলে তার ওপর নির্যাতনের কথা জানায়। মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে জামাইকে টাকাও দিই।”
সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সুমিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের গাড়িতে করেই তাকে উপেজলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সুমি ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
“নিরাপত্তার কারণে সুমি তার স্বামীর কাছে না গিয়ে বাবার বাড়িতে এসেছে। তার সঙ্গে তার স্বামী আসেননি। ভবিষ্যতে সুমির কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে সেটা মানবিকভাবে বিবেচনা করা হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের উপ-সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, পাঁচপীর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর প্রধান, সদস্য এমাজুল হকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলন।
পাঁচপীর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর প্রধান বলেন, “সুমিকে নির্যাতনের বিষয়টি অমানবিক। তাকে নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিসহ জড়িত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।”