এক গৃহকর্মীর পাঁচ বছরের মেয়েকে যৌন নিপীড়নের মামলার পর নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইন্সটিটিউটের এক ছাত্রকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় একদল ব্যক্তি।
Published : 28 Aug 2017, 12:07 AM
রোবববার চারুকলা ইন্সটিটিউটে ঢুকে তারা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব কান্তি শীলকে মারধর করে পুলিশে সোর্পদ করে।
এই ঘটনার মূল ব্যক্তি হিসেবে আসছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতের নাম, যিনি ওই এলাকা থেকে চারুকলা ইন্সটিটিউট তুলে দেওয়ার পক্ষপাতি।
রাজীবের বিরুদ্ধে যে শিশুকে নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে, ওই শিশুটির মা আরাফাতের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়ার গৃহকর্মী।
মামলার আসামি রাজীবকে ‘মেধাবী ও ভালো’ ছেলে উল্লেখ করে ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ সামসুল আলম আজাদ বলছেন, এটা নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ একটি অংশ।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর শাহ শাহীন পারভেজ জানান, পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রাজীবকে ধরে থানায় সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
শিশুটির মায়ের করা মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল (শনিবার) সকাল ৯টা ও বিকাল ৫টায় চকলেট খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটিকে ক্লাসে নিয়ে তাকে যৌন নিপীড়ন করে। শিশুটি রাতে বাসায় গিয়ে বিষয়টি তার মাকে জানায়।
“আজ সকাল ১০টায় বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী গিয়ে রাজীবকে ধরে পুলিশে দেয়।”
অধ্যক্ষ সামসুল আজাদ বলেন, রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে স্থানীয় কিছু ‘দুষ্কৃতকারী’ ক্লাস চলাকালে ঢুকে টেনে-হিঁচড়ে রাজীবকে ধরে নিয়ে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।”
‘ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে কলেজের আঙ্গিনায় মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ এলাকার কিছু দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন রকম অসামাজিক কর্মকাণ্ড করে আসছিল, তাদের মূল উদ্দেশ্য কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে কলেজটিকে উচ্ছেদ করা।”
এদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজীব কান্তি শীলও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে আসছিলেন বলে অধ্যক্ষের ভাষ্য।
ওই সব ‘দুষ্কৃতকারীদের’ বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গত ২৯ জুলাই একটি জিডি করা হয়, যাতে হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্রদের নিরাপত্তার আবেদন জানানো হয় বলে জানান অধ্যক্ষ।
তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইন্সটিটিউটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কক্সবাজারের ছেলে রাজীব খুবই মেধাবী ছাত্র। সে খুবই ভালো ছেলে।
“আমরা নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ রাজীব কান্তি শীলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ এবং তার মুক্তি দাবি করছি। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।”
বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকেও জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আরাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই শিশুর মা তার ভাইয়ের বাড়িতে দীর্ঘ দিন যাবত কাজ করেন। শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এলাকার লোকজন গিয়ে ওই ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
অধ্যক্ষের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে চারুকলার শিক্ষার্থীদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি চারুকলা ইন্সটিটিউটটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, “শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ওই শিশুর মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা অভিযোগের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”