মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলের গয়ড়া গ্রামে পাক সেনারা একদিনে ৬৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল।
Published : 25 Apr 2017, 12:19 AM
১৯৭১ এর ২৪ এপ্রিল ওই হত্যাকাণ্ড হয়। ওইদিন নিহতদের কয়েকটি গণকবরে সমাহিত করা হয়। অযত্ন, অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে এসব গণকবর লুপ্ত হতে চলেছে। স্থানীয় বাজারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ হলেও এ গ্রামে কোনো স্মৃতিফলক করা হয়নি।
দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের সদর দপ্তর বেনাপোলের কাগজপুকুর ও গয়ড়ায় পাকসেনা ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল। ওই যুদ্ধে পাকবাহিনীর আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে কাগজপুকুরের পতন ঘটে। ওইদিন ৬৩ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা পুড়িয়ে দেয় ওই গ্রামের প্রায় সবার বাড়ি ঘর।
যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার বেনাপোল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডই গয়ড়া গ্রাম। বেনাপোল সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের কাগজপুর মোড় থেকে দক্ষিণে মোড় নিলেই গয়ড়া গ্রাম শুরু।
মনিরুজ্জামান জানান, ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে এ গ্রামে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানিদের মধ্যে পনের দিন ধরে চলে যুদ্ধ। যুদ্ধে মারা যায় দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষ। সামনাসামনি ওই যুদ্ধে পাকিস্তানি ১৫০ সেনা নিহত হয় এবং ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান।
গয়ড়া গ্রামে মসজিদের পশ্চিম পাশে, কিতাব আলির বাড়িতে, নূর মোহাম্মদের বাড়ির পুকুর পাড়ে, বাবর আলির বাড়ির প্রাচীরের পাশে গণকবর আছে। কিন্তু এ গ্রামে কোনো স্মৃতফলক নেই। স্থানীয়রা পরে কাগজপুকুর বাজারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা দীন ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজাকারদের দেওয়া ছক অনুযায়ী খান সেনারা গয়ড়া গ্রামে আক্রমণ করে। তখন প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেও স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা সম্মুখযুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি। এ সময় ওদের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য ইপিআর বাহিনী কন্যাদহ খালের উপরের ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়; কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
তিনি বলেন, পাকসেনারা গয়ড়া গ্রামে ঢুকেই কিতাব আলির বাড়িতে প্রথম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই সময় কিতাব আলি, তার ছেলে কেরামত আলি ও আব্দুর রহমান, দুই ভাই লুৎফর রহমান ও ওসমান আলি ও মেয়ে গুলিতে মারা যান।
৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ নূর মোহাম্মাদ বলেন, “কিতাবের বাড়ির পশ্চিমপাশের বাড়িটি ছিল আমাদের। ওদের বাড়িতে হামলার পর খানেরা আমাদের বাড়ি এসে প্রথমে হত্যা করে আমার শাশুড়ি লতিফুর নেছাকে; পরে স্ত্রী পরী বেগম, ছয় মাস বয়সী ছেলে, ভাইবউ আছিয়া খাতুন ও সাইফুন নেছাকে হত্যা করে।”
“আমি খান সেনাদের দেখে দৌড়ে পালাতে পারলেও ওরা পালাতে পারেননি,” বলেন তিনি।