সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান চলার মধ্যে কাছের একটি জায়গায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন র্যাব-পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৪৩ জন।
Published : 25 Mar 2017, 06:46 PM
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই জঙ্গি আস্তানার এক কিলোমিটারের মধ্যে পাঠানপাড়ায় এই বিস্ফোরণে ছয়জন নিহতের কথা জানান সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়ছর।
তারা দুজনই পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্য ছিলেন বলে জানান জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন।
নিহতদের অপর চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম, কলেজছাত্র অহিদুল ইসলাম অপু ও নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম (৩৮)।
নিহত আরেকজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিলেটের মদনমোহন কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অপু বিস্ফোরণস্থলেই মারা যান বলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রুকনুদ্দিন জানান।
আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাকিদের মৃত্যু হয়।
এরপর রাত ১টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিদর্শক মনিরুলের মৃত্যু হয় বলে তার থানার ওসি আখতার জানান। কাছাকাছি সময় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমের মৃত্যু হয় বলেও জানান তিনি।
কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খোলেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা। তবে সিলেটের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের জেরেই এটা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
আহতদের মধ্যে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও র্যাব ৯ এর মেজর আজাদ এবং দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনুর রশিদ রয়েছেন।
র্যাব কর্মকর্তা আজাদকে রাতেই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার সারা শরীরে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় ওসমানী মেডিকেলের একজন চিকিৎসক জানান।
অন্তর দীপ নন্দী নামে ওই চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাকে (লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ) মুমুর্ষূ অবস্থায় আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। তার সারা শরীরে স্প্লিন্টার ছিল। এখানকার চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার করেছেন। স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।”
বিস্ফোরণে আহত মোট ৪৩ জনকে ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করা হয় বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রুহুল আমিন জানান।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ওই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর প্রায় ৩০ ঘণ্টা সেখানে পাহারা বসিয়ে শনিবার সকালে পুলিশের সহায়তায় অভিযান শুরু করেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। বাড়িটিতে জিম্মি দশায় থাকা ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হলেও অভিযান শেষ হয়নি।
ওই অভিযান নিয়ে সন্ধ্যায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পরপরই কাছের পাঠানপাড়ায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণের শব্দ শুনে অভিযানস্থল থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। শিববাড়ির মূল সড়ক থেকে ওই জঙ্গি আস্তানার দিকে যে রাস্তাটি গেছে, তার কাছেই বিস্ফোরণটি ঘটে।
কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বিস্ফোরণের বিস্তারিত না বললেও ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে এতে আহত গুলজার আহমেদের কাছে।
ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানের খবর নিতে আসা তারা কয়েকজন সন্ধ্যায় ওই জায়গায় ছিলেন।
“লুঙ্গি পরা এক লোক হাতে একটি কালো পলিথিন নিয়ে আসে। কয়েকজন তাকে আটকে পলিথিনে কী আছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘লাল শাক’। এর পরপরই একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হন।
“এরপর পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা এলে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ২৫ জনের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।”
বিস্ফোরণস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মটরসাইকেলও পড়ে থাকতে দেখার কথা জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।