ফেব্রুয়ারি এলেই যেন উৎসবে মেতে ওঠে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলের বাজার। ফুলচাষি, পাইকার আর শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় কাটছে এখন।
Published : 09 Feb 2016, 01:14 PM
বসন্তবরণ, ভ্যালেন্টাইনস ডে আর একুশে ফেব্রুয়ারি সমানে রেখে প্রতিবছরই গদখালীর বাজারে ফুল বেচাকেনা বেড়ে যায়।
এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বেচাকেনাও ভালো হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গদখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকেই রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, জিপসি, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, লিলিয়াম, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল বাস, ট্রাক আর পিকআপ ভ্যানে বোঝাই করা হচ্ছে।
ফুল নিয়ে এসব যানবাহন চলে যাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুলের দোকানগুলোতে।
স্থানীয় ফুলচাষি বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম সবই বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
“গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের পাইকাররা ভিড় করছে এখানকার বাজারে। প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি টাকার উপর ফুল বেচাকেনা হচ্ছে।”
এভাবে বেচাকেনা বলে এবার ফুলের ব্যবসা বিশ কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, বলেন আব্দুর রহিম।
তিনি আরও বলেন, বসন্তবরণ উৎসব, ভ্যালেন্টাইনস ডে আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যে ফুল বেচাকেনা হয় তার অন্তত ৭৫ ভাগ যশোরে উৎপাদিত হয়।
তবে অন্যান্য বছররের তুলনায় এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় চাষিদের ফুলের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঝিকরগাছার নন্দী ডুমুরিয়া গ্রামের ফুলচাষি গোলাম রসুল বলেন, এবার ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস ফুলের পাশাপাশি ইউরোপের জারবেরা ফুলও চাষ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন রংয়ের গোলাপও করেছেন।
আবহাওয়া ভালো থাকায় বাগানে আগের চেয়ে বেশি ফুল এসেছে। ফুল বিক্রি করে এবার পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
ঝিকরগাছার কাগমারী গ্রামের রকিবুল ইসলাম বলেন, “দুদিনে আমি দেড় লাখ টাকার ‘জারবেরা’ বিক্রি করেছি।”
বিদেশি এই ফুল খুব কম জমিতেই চাষ করা যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেটের অভিজাত এলাকার ফুলের দোকান ছাড়া সাধারণত জারবেরা রাখা হয় না বলেও জানান তিনি।
গত তিনদিনে প্রায় দুই লাখ টাকার জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস ও গোলাপ বিক্রি করেছেন বলে জানালেন ঝিকরগাছার হাড়িয়া গ্রামের আরেক চাষি শাহাজাহান আলী।
গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসা পিরোজপুরের ফুল ব্যবসায়ী তওফিক এলাহী বলেন, “৬০ হাজার টাকা নিয়ে ফুল কিনতে গদখালী এসেছি। এসে দেখি ফুলের বাজার খুব চড়া।”
তিনি বলেন, “আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়েছে। কৃষকরা এবার প্রতিবিঘায় উৎপাদিত ফুল গড়ে ৭০-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। ”
যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই গদখালীর ছোট্ট এই ফুলের বাজারের দেখা মেলে। এখানে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, জিপসি, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, লিলিয়াম, চন্দ্র মল্লিকাসহ নানা জাতের ফুলের চাষ হয়।
এসব ফুলের মধ্যে জারবেরার স্টিক ১২ থেকে ১৫ টাকায়, রজনীগন্ধা ২-৩ টাকায়, গোলাপ ১০-১৫ টাকায়, রং ভেদে গ্ল্যাডিওলাস ৩-১০ টাকায় এবং এক হাজার গাঁদা ৩৫০ টাকায় মিলছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
গতবছর এ মৌসুমে আট কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।