তিন মাস পর বাবা ও ভাইকে নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হন স্বামী আল আমিন।
Published : 13 Nov 2024, 12:27 AM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় স্বামী ‘নিহত’ হয়েছেন অভিযোগ করে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলার তিন মাস পর থানায় হাজির হলেন স্বামী। বললেন, এটি তার জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা আল আমিন তার বাবা ও দুই ভাইকে নিয়ে সোমবার রাত ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হন। তার দাবি, তার অজান্তে স্ত্রী কুলসুম ঢাকার আদালতে তাকে ‘মৃত দেখিয়ে’ হত্যা মামলাটি করেছিলেন, যা এখন তদন্ত করছে সাভারের আশুলিয়া থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে সুরমা এলাকায় আলোচনা তৈরি হয়। সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জীবিত থাকার বিষয়ে আল আমিন থানায় বসে ভিডিওতে সবকিছু বলেছেন। হত্যা মামলাটি আশুলিয়া থানার তদন্তাধীন হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব মঙ্গলবার সকালে এসে তাকে নিয়ে গেছেন।
ওসি বলেন, আল আমিনের পরিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। কাজের সূত্রে থাকতেন মৌলভীবাজারের জুড়িতে। তার শ্বশুর বাড়ি আশুলিয়ায়।
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সরকার পতনের দিন ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ায় ঘটনা ঘটে। সেসময় ভ্যানে স্তূপ করে রাখা লাশের ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করে। ভ্যানে রাখা নিহতদের একজনের পরিচয় অজ্ঞাত রয়ে যায়।
সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে নিজের স্বামী আল আমিন দাবি করে কুলসুম নামে ওই নারী ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করার আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সেটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হলে তদন্তে নামে পুলিশ।
ভ্যানে লাশের স্তূপ: জার্সি দেখে নিখোঁজ স্বামীকে শনাক্ত করলেন স্ত্রী
তবে কুলসুমের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় অনুসন্ধান শুরু করেন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কর্মী। এতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পরে কুলসুমের স্বামী আল আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যে অনুসন্ধানে নেমে তার ভাইয়ের খোঁজ পায় র্যাব। তার সঙ্গে কথা বলে র্যাব সদস্যরা নিশ্চিত হন, মামলায় মৃত দেখানো আল আমিন বেঁচে আছেন।
এর মধ্যেই সোমবার রাতে দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হয় আল আমিন।
সেখানে ধারণা করা এক ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “ভাই, আমি মরি নাই, কেউ যদি আমার অজান্তে কাগজে-কলমে মাইরা ফালায়, তাহলে আমার কী বা করার আছে? আমারে যে মরা দেখাইয়া মামলা করছে আমার বৌ, তা আমি জানতাম না। যখন শুনলাম, তখন ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
”নিজের স্ত্রী যদি স্বামীকে মৃত বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে সেই স্বামী সবচেয়ে দুর্ভাগা।”
তাদের এক কন্যা সন্তান থাকার তথ্য তুলে ধরে আল আমিন বলেন, “কয়েক মাস ধরে পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়ায় সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। দেশে গণ্ডগোলের পুরোটা সময় আমি ও আমার স্ত্রী মৌলভীবাজারের জুড়িতে অবস্থান করেছি। সেসময় আশুলিয়ায় একবারের জন্যও যাইনি। অথচ আমাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে আমার স্ত্রী।”
এ মামলার বাদীর ছবি দেখে আল আমিন নিশ্চিত হয়েছেন, ছবির মানুষটি তার স্ত্রী।
আল আমিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার ভাই বেঁচে আছে। সে তিন দিন আগে আমাকে বলেছে, মামলার বিষয়টি। আল আমিন থানায়ও গিয়েছিল, কিন্তু থানা থেকে সমাধানের কোনো পথ দেখাতে পারেনি। তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে।
“যখন র্যাব বিষয়টি জানতে পারে তখনই ভাইকে দক্ষিণ সুরমা থানায় আসতে বলি।”
ছেলেকে মৃত দেখিয়ে মামলার ঘটনায় হতবাক আল আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, “এমনটা হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার আতংকিত। ছেলের বৌ কুলসুম কেন এমনটি করেছে তা মাথায়ও আসছে না। বিষয়টি নিয়ে কুলসুমও কোনো কথা বলছে না।”
এ বিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর এবং তদন্ত কর্মকর্তা রাকিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
আল আমিনের স্ত্রী কুলসুমের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।