বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা নানা ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে রাঙামাটিতে।
Published : 17 Oct 2024, 09:24 PM
পাহাড়ে জাতিগত সহিংসতা বন্ধে সরকার ও জাতিসংঘের পদক্ষেপ কামনা করেছেন চাকমা সার্কেল প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
তিনি বলেছেন, “বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাস বর্ষাব্রত শেষে আগামী এক মাসের মধ্যে কঠিন চীবর দান হওয়ার কথা। তবে আমি শুনেছি, চলমান পরিস্থিতির কারণে এ বছর ভিক্ষুরা এই কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“আমি এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ভিক্ষু সংঘের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইনি। তবে এটাও শুনেছি কঠিন চীবর করতে হলে কিছু শর্ত, অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিত আছে তা পূরণ করতে হয়। মানে সেইসব কারণগুলো বিবেচনা করেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
দেবাশীষ রায় বলেন, “যে বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিক্ষুরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেজন্য সরকার ও জাতিসংঘ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করুক যাতে পাহাড়ে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা বন্ধ হয়।”
আগামীতে যাতে কঠিন চীবর দানসহ সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিরাপত্তার সঙ্গে পালন করতে পরে সেই প্রত্যাশার কথা বলেন চাকমা সার্কেল চিফ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেবাশীষ রায় এসব কথা বলেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা নানা ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে রাঙামাটিতে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসব্যাপী নির্জন আশ্রমে বাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে লোকারণ্যে ফিরে আসেন, একে ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ও বলা হয়।
রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল থেকেই পঞ্চশীল গ্রহণ, প্রার্থনা, বুদ্ধ সংগীত, মোমমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এরপর অষ্টপরিষ্কার দান, অষ্টশীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা প্রভৃতি আচার শেষে দেব-মানবের তথা সব প্রাণীর হিতার্থে ধর্মদেশনা দেওয়া হয়।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত- এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন। আর এই বর্ষাব্রত পালন শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে তারা প্রবারণা করেন। স্বাভাবিক সসময়ে প্রবারণা পূর্ণিমার পর দিন হতে পরবর্তীতে এক মাস বিহারে বিহারে অনুষ্ঠিত হয় কঠিন চীবর দান।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। তবে পূণ্যার্থীদের আশা, আগামী বছর সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবে এবং সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিরাপদ করার আশার কথা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে পূণ্যার্থীদের উদ্দেশে বনভান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে, একে-অপরের প্রতি হিংসায় লিপ্ত না হয়ে সৎ চিন্তা ও সৎ কুশলকর্ম সম্পাদন করে নিজেকে আত্মসংযমে রেখে বুদ্ধের নিয়ম-নীতি পালনের আহ্বান জানান রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
এ সময় আরো ধর্মদেশনা দেন রাজবন বিহারের জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ভদন্ত জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
পূণ্যার্থী জ্ঞান লতা চাকমা বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে লোকারণ্যে ফিরে আসেন। একে ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ও বলা হয়। এই দিন অতীতের ভুল-ভ্রান্তির জন্য একে-অপরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। এমন পূর্ণময় অনুষ্ঠানে ভক্তকূলের প্রার্থনা হচ্ছে, সব সম্প্রদায়ের মৈত্রীময় সহবস্থানেরর পাশাপাশি দেশ ও জাতির শান্তি-মঙ্গল কামনা।
রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহসভাপতি নিরুপা দেওয়ান বলেন, “একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা থাকবে। এক ধর্মের মানুষের অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে এই প্রত্যাশা নিয়ে আজ প্রার্থনা করবো। বাংলাদেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বিশ্বের সুখ-শান্তি বিরাজ করে এটাই কামনা।”
ধর্মীয় দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির।