আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন।
Published : 10 Apr 2024, 08:26 PM
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সরকারি ঘোষণার এক দিন আগেই এসব অঞ্চলের মানুষ ঈদ উদযাপন করেন। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বাগেরহাট:
বাগেরহাটের মোংলায় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় সুন্দরবন ইউনিয়নের দুয়ারীজারা গ্রামের চটেরহাট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঈমামতি করেন খতিব বেল্লাল সরদার। এই মসজিদে অন্তত পাঁচটি গ্রামের মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন।
চটেরহাট জামে মসজিদের সভাপতি এম নুরুল আমিন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সুন্দরবন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দির ও কংসপুরা গ্রামের একাংশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।
‘জাহাঙ্গীর তরিকার’ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছে আসছে। শিলই গ্রামে ঈদের জামাতে ইমাম ছিলেন মো. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো স্থানে নব চন্দ্র দেখা দিলে, সেই অনুযায়ী ঈদ পালন করা উচিত। তাই আমরা ঈদ উদযাপন করছি।”
দিনাজপুর :
দিনাজপুর সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। সকাল সোয়া ৮টায় শহরের বাসুনিয়াপট্টিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নারীদের জন্যও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রায় ছয়শত নারী-পুরুষ নামাজে অংশ নেয়; এতে ঈমামতি করেন বিরলর উপজেলার মহেশপুর দাখিল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “এই বিশ্বে চন্দ্র-সুর্য্য একটাই। পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ঈদের চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ নামাজ আদায় করতে হবে। আমরা সৌদির সঙ্গে রোজা শুরু করি এবং ঈদ উদযাপন করি।”
তাদের অনুসারীরা চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল, বিরামপুর, বীরগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।
পিরোজপুর:
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার ১০ গ্রামের আট শতাধিক পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে।
মঠাবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাচিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের সাত শতাধিক পরিবার, কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী গ্রামের ৪০টি পরিবার, নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ৭০টি পরিবার ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল ১০টায় মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে ঈদের আরেকটি জামাত হয়। সকাল ৮টায় কাউখালীর শিয়ালকাঠীর মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জামালপুর :
সরিষাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ ঈদ উদ্যাপন করছে। উপজেলার বলারদিয়ার, দক্ষিণ বলারদিয়ার, মূলবাড়ি, সাতপোয়া, বালিয়া, বনগ্রাম, হোসনাবাদ, বাউসী, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, পুঠিয়ারপাড়, বগারপাড় ও পাটাবুগা গ্রামের পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
বুধবার সকাল সোয়া ৮টায় দক্ষিণ বলারদিয়ার গ্রামে মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আজিম উদ্দিন।
দেড় যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন বলে জানান আজিম উদ্দিন।
মাদারীপুর :
মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত পড়ান চরকালিকাপুর ফরাজীবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।
তিনি বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬৯টি দেশে চাঁদ দেখা যাওয়ায় বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.) এর অনুসারী ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় শহরে ফুটবল মাঠ এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপজেলার শিঙ্গা, শিতলী, ভালকী ও পায়রাডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। ইমামতি করান ঈদ জামাত কমিটির সভাপতি বজলুর রহমান।
এ ছাড়া উপজেলার পায়রাডাঙ্গা ও নিত্যানন্দপুর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান।
মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। বুধবার সকাল ৭টায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্থ নামের বাসায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জামাতে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী ও পুরুষরা অংশ নেন। ইমামতি করান আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব, উজান্ডি)।
২০০৭ সাল থেকে আব্দুল মাওফিক চৌধুরীর (পীর সাহেব উজান্ডি) অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।
নোয়াখালী :
নোয়াখালীর চারটি গ্রামের কয়েকশ মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় দুই উপজেলার আটটি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মসজিদগুলো হলো- বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্ত বাগ গ্রামের সিনিয়র মাদ্রাসা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ পোদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ, বসন্তবাগ নগর বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ ভূঁইয়া বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, পশ্চিম বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, ফাজিলপুর গ্রামের দায়রা বাড়ির জামে মসজিদ, জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও নোয়াখালী পৌরসভার হরিণারায়নপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফ মসজিদ।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদের জামাতের আয়োজন করে আসছেন।
রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফে ঈদের জামাতের ইমামতি করান রহিমিয়া রশিদিয়া আল কাদেরিয়া দরবার শরীফ চট্টগ্রামের খাদেম আব্দুল কাদের।
তিনি বলেন, “চাঁদ উঠার ওপর নির্ভর করেই রোজা রাখা এবং ঈদ উদযাপন করা হয়। পৃথিবীর আকাশে চাঁদ দেখা গেছে। বাংলাদেশ ছাড়া সৌদি আরবসহ সকল মুসলিম দেশে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছি।”
শেরপুর:
শেরপুরের সাতটি গ্রামে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয়আনি পাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া ও নারায়নখোলা এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও চতল।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি জামাতে দুইশ থেকে আড়াইশ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পর্দার আড়ালে থেকে নামাজ আদায় করেন।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় ২৫ গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করেছে। সদর উপজেলার ভাড়-খালীতে বুধবার সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান।
এ ছাড়া একই সময় বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদে ঈদের নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মো. মোহাব্বত আলী।
মাহবুবুর রহমান বলেন, গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়।
বরিশাল :
বরিশাল মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশালে যারা ঈদ পালন করছেন তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী বলে জানা গেছে।
নগরীর পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরীবাড়ি শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদ, তাজকাঠীর হাজী বাড়ীর জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ, দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় পাঁচশত পরিবার ঈদ পালন করছেন।
এ ছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামের এক হাজারের বেশি পরিবার ঈদ উদযাপন করছেন।
মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় এবং সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামের জাহাগিরি সুফী দরবারের প্রায় দুই হাজার অনুসারী রয়েছে।
জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী মমিনউদ্দিন কালু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত সৌদি আরবের সঙ্গে মিল করে নয়। পৃথিবীর কোথাও ঈদের চাঁদ উঠেছে শুনলে আমরা তা উদযাপন করি। বাবা-দাদার করে আসছেন। আমরাও সেইভাবে শুধু ঈদ নয়। রোজাও পালন করেছি।”