গাছ কাটার সময় স্ব স্ব অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
Published : 02 Jun 2024, 09:40 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির মধ্যে দুই শতাধিক গাছ কেটে কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ও চারুকলা অনুষদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গাছ কাটার প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের পেছনের অংশে কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের সামনে চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণ কাজের জন্য এসব গাছ কাটা হয়।
প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক মানববন্ধন, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুই স্থানেই এস্কেভেটর দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। দুই ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়েছে। এছাড়া আরও শতাধিক ছোট বড় গাছ কাটা পড়বে বলে জানা গেছে।
গাছ কাটার সময় স্ব স্ব অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, গাছ কাটার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
পরে তারা সেখানেই নির্বিচারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, “ছুটির ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই, এই সুযোগে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে গাছ কাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যান করে ভবন নির্মাণ করা।”
এ ছাড়া অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডারের দরপত্র আহ্বান করাসহ তিন দফা দাবিতে দুপুরের দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আরেকদল শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।
তাদের অন্য দুটি দাবি হল- অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত করা এবং অ্যাকাডেমিক ভবন ব্যতীত আর একটি স্থাপনাও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার আগে নির্মাণ না করা।
এদিকে, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে ‘নির্বিচারে’ গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জাবি শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি সোহেল আহমেদ বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ-প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অনন্য। তবে যখন সেটা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়, তেমন কাজ কখনোই সমর্থন করা যায় না। শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অবশ্যই ভবনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটা প্রাণ-প্রকৃতি ও সৌন্দর্যকে ধ্বংস করে নয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
তবে চারুকলা অনুষদ ভবনের প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া কাটা গাছগুলোর পরিবর্তে ক্যাম্পাসে আমরা নিজেরাই আরও গাছ রোপণ করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব, যেন তারা আমাদের অগ্রগতি লক্ষ্য রাখতে পারেন।”