“পুরো এলাকায় কয়দিনে বিদ্যুৎ দিতে পারব তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।”
Published : 28 May 2024, 05:11 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে বাগেরহাটে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে দুদিন পরেও গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি। প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাগেরহাট কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সুশান্ত রায় মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তারের উপর গাছপালা উপড়ে এবং সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি গাছপালা উপড়ে ৭০২টি পয়েন্টে তার ছিঁড়ে পড়েছে।
“১৩০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে, ৩৫টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৩৯৪টি মিটার ভেঙে গেছে।”
জেলার নয় উপজেলাসহ খুলনার কিছু অংশ নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের এই বিভাগের অধীনে চার লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তারা পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পাবেন তবে সেটি কখন তা বলতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
সরজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙা, বাদেকাড়া, পৌরসভার খারদ্বারসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে আছে, তার ছিঁড়ে ঝুলে সড়কের উপর পড়ে রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের লাইন লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন। তাতে পুরো জেলার বিদ্যুৎ পৌঁছতে বেশ কয়েকদিন লাগবে বলে মনে করছেন গ্রাহকরা।
একই অবস্থা উপকূলীয় শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলাতে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন শ্রমিক নিয়ে তারের উপরে পড়ে থাকা গাছপালা কেটে সরাচ্ছেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ডে চার হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের দিন (রোববার) বিকালে বিদ্যুৎ চলে যায়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি।
“গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারছেন না, ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও মোবাইল, ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বাইরে থাকা স্বজনরা যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছেন না।”
একই ইউনিয়নের বাদেকাড়া গ্রামের মুনিম রায়হান বলেন, এই এলাকায় তিন হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের দিন বিকালে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়। এখনও আসেনি।
“আমার বাড়ির সামনে ঝড়ের রাতে বিদ্যুতের তারের উপরে বিশাল আকৃতির একটি মেহগনির গাছ উপড়ে পড়ে। তিনদিন পার হতে চললেও এই এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের কোনো লোক আসেনি। আমরা নিজেরা এখন তারের উপর থেকে গাছটি কেটে সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাগেরহাট কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সুশান্ত রায় বলেন, “সোমবার সকালে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে আমরা বেশি শ্রমিক নিয়ে মোংলা ইপিজেড ও বাগেরহাট শহরের বিসিক শিল্পনগরীর দুটি সাব-স্টেশন চালু করি। কিন্তু বিকালে ঝড়ো বাতাসে তা আবার বন্ধ রাখতে হয়।
“মঙ্গলবার ভোর থেকে শত শত শ্রমিক জেলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন। যেসব এলাকাতে কম ক্ষতি হয়েছে সেসব এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় বিদ্যুৎ চালু করা হবে। আজকের মধ্যে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। তবে সংখ্যা বলতে পারছি না। আর পুরো এলাকায় কয়দিনে দিতে পারব তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না”, বলেন সুশান্ত রায়।