“পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে চাপা দেওয়ার জন্য ডাম্প ট্রাকের চালক বাপ্পীকে নির্দেশ প্রদান করেন কামাল।”
Published : 16 Apr 2024, 06:09 PM
কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার ঠেকানোর সময় বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’সহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে বনবিট কর্মকর্তা হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ মো. কামাল উদ্দিনকে সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম শহরের সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে এবং সহযোগী হেলাল উদ্দিনকে উখিয়া উপজেলার কোটবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করছে র্যাব।
গ্রেপ্তার মো. কামাল উদ্দিন (৩৯) উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে এবং হেলাল উদ্দিন (২৭) একই ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নূর আলম মাইজ্জার ছেলে।
গত ৩১ মার্চ মধ্যরাতে উখিয়ায় সংরক্ষিত বনে অভিযানে গিয়ে ‘মাটি পাচারকারীদের ডাম্প ট্রাকের চাপায়’ বনবিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) প্রাণ হারান।
পাহাড় কেটে মাটি পাচারকারী রোধে সাজ্জাদুজ্জামান সজলের ধারাবাহিক অভিযানে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাব কর্মকর্তা এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছিল।
চক্রের অধীনে প্রায় ১০-১২টি ডাম্প ট্রাক ও কয়েকটি মাটি কাটার ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে পাহাড়ের মাটি কেটে এনে প্রতি ডাম্প ট্রাক ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রি করে। চক্রের মূল হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্প ট্রাক মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়।
হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান একজন সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন মন্তব্য করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ বলেন, “গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্প ট্রাক আটক করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন।
“ফলে এই বন কর্মকর্তা অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য নানা পরিকল্পনা করতে থাকে।
“এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্প ট্রাক আটক করেন এবং কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করেন।
“সেজন্য কামালসহ অন্যান্য আসামীরা সাজ্জাদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।”
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “পরিকল্পনা মত চালক বাপ্পী গত ৩১ মার্চ রাতে কামালসহ দু’জন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে একটি ডাম্প ট্রাক নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার উদ্দেশ্যে বের হন।
“ডাম্প ট্রাকটির মালিক সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের আগমনের উপর নজর রাখার জন্য স্থানীয় একটি বাজারে অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ বন বিভাগের আরেক সদস্য মো. আলীকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
“বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্প ট্রাক নিয়ে ফেরার সময় স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে আসতে দেখেন। “
“এ সময় ডাম্প ট্রাকের চালক বাপ্পীর পাশে বসা ছিলেন কামাল। তিনি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পীকে নির্দেশ প্রদান করেন। তখন বাপ্পী মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে গাড়ি চাপা দেয়। ফলে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং মোহাম্মদ আলী আহত হন।“
এ ঘটনায় পরদিন বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
গ্রেপ্তার দু’জন ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি। তাদের উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাব অধিনায়ক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল চালক মো. বাপ্পী (২৩) এবং ১ এপ্রিল ছৈয়দ করিম (৩৫) নামের এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
নিহত মো. সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।
এ ঘটনায় আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে।
আরও পড়ুন:
মাটি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চারই কাল হল বন কর্মকর্তার: পুলিশ
উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যা: প্রধান আসামি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার