ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে ১৫ দিন ধরে এই চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়েছে।
Published : 24 Sep 2024, 10:16 PM
ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প করে বন্যায় আক্রান্ত চার জেলার গবাদি পশু-পাখির চিকিৎসা দিয়েছে দুটি বেসরকারি সংস্থা।
ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে ১৫ দিন ধরে এই চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করে প্রাণিকল্যাণ সংস্থা অভয়ারণ্য এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন।
সাজেদা ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই ক্যাম্প বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাজ করছে। প্রান্তিক কৃষকদের গবাদিপশু এবং পোলট্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে সহায়তা করা হচ্ছে।
সাজেদা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার দেবকুসুম বড়ুয়া বলেন, “বন্যার পরে ত্রাণ সরবরাহ এবং বিতরণে সবাই এগিয়ে এলেও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার জন্য তেমন উদ্যোগ সচরাচর দেখা যায় না। বিশেষ করে কৃষকদের গরু, ছাগল, মহিষ বা হাঁস-মুরগির জন্য কোনো বন্যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়া অসুখের চিকিৎসা সেবাদান, প্রয়োজনীয় ওষুধ বা পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে না।
“অথচ গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এগুলো টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরি। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই আমরা অভয়ারণ্য ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এসব এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ভেটেরিনারি ক্যাম্প পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অভয়ারণ্যের নির্বাহী পরিচালক কাওসার শাকিল বলেন, তারা ১১ সেপ্টেম্বর ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রথম ক্যাম্প শুরু করেন এবং এ চার জেলার ঘুরে ঘুরে এ পর্যন্ত ১৩টি স্থানে পশুপাখিদের সেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “এবারের আকষ্মিক বন্যার তৃতীয় দিন থেকেই অভয়ারণ্য বন্যার ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। মানুষের জন্য চাল, ডাল, খাবার পানি এবং পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবেলেটের পাশাপাশি আমরা প্রথম দিন থেকেই কৃষকদের জন্য পশু খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করি যা কিনা অনেকের কাছেই খুব বিষ্ময়কর মনে হয়েছে।”
যে এলাকায় ক্যাম্প করা হয়েছে সেই এলাকায় আগের দিন মসজিদের মাধ্যমে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যাতে আশপাশের গ্রামের মানুষ তাদের অসুস্থ প্রাণিদের নিয়ে ক্যাম্পে আসতে পারেন বলেও জানান তিনি।
ক্যাম্পে আসা কোনো প্রাণির যদি জটিল অসুস্থতা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ক্যাম্পের চিকিৎসকরা স্মার্টফোনে ভিডিও ধারণ করার মাধ্যমে ঢাকায় অবস্থানরত সিনিয়র ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন এবং চিকিৎসা করেন।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার আহম্মদ হোসেন বলেন, “আমার তিনটি গরু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। এতদিন চিকিৎসার কথা চিন্তা করতেই পারিনি। ক্যাম্পের ডাক্তররা এসে আমাদের গরু-ছাগলের চিকিৎসা করেছেন, ফ্রি ওষুধ দিয়েছেন, এতে অন্তত আমাদের গবাদিপশু ভালো থাকার নিশ্চয়তা পেলাম।”
মুড়া আমতলী গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী নাসিমা খাতুন বলেন, “দুইটা সংস্থা থেকে টাকা নিয়েছি, আশপাশের সবাই ত্রাণ পেয়েছে, কিন্তু কেউ আমাদের পশুপাখির খোঁজ নেয়নি। ইনারা এসে আমার গাভীনের জন্য ওষুধ দিয়ে গেলেন, এতদিন কেউ এটা করেনি।”
চার জেলায় এক হাজার ১৫ জন কৃষকের প্রায় ২৬ হাজার প্রাণির চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেছে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্যাম্পের চিকিৎসক দল।