Published : 04 May 2025, 01:00 PM
দেশে বাসমতি চালের আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবন করেছে ব্রি ধান-১০৪।
ব্রি’র বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রিমিয়ার কোয়ালিটির এ ধান চাষ কৃষকের আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেবে। পাশাপাশি আবাদ বৃদ্ধি পেলে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে বলেও আশা তাদের।
ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনা খাতুন বলেন, “সম্ভাবনাময় ব্রিধান-১০৪ দেশের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করবে।”
দেশের হোটেল-রেস্টুরেন্ট, অনুষ্ঠানের পাশাপাশি খাদ্যরসিক ব্যক্তির ডাইনিংয়ে বাসমতি চালের ভাত, পোলাও বা বিরিয়ানি বেশ সমাদৃত। তবে সুগন্ধি এই চাল মূলত ভারত-পাকিস্তান থেকে আমদানি করতে হয়।এতে ব্যয় হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
ক্রেতা চাহিদা থাকায় এ ধরনের চালের বাজারমূল্যও বেশি। সাধারণত দেশের সুপার শপগুলিতে প্রতি কেজি বাসমতি চাল ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা গেলে কৃষকও লাভবান হবেন।
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রোমেল বিশ্বাস বলেন, ব্রি ধান-১০৪ বাসমতি টাইপের ব্রির একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত। এতে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১ হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম।
পরবর্তী বছর চাষাবাদের জন্য এ ধানের বীজও সংরক্ষণ করা যায় বলে জানান তিনি।
এই ধান থেকে পাওয়া চালের পুষ্টিগুণ নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ব্রি ধান-১০৪ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯ দশমিক ২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৯ ভাগ। এ ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকার-আকৃতি অতিরিক্ত লম্বা চিকন (৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার লম্বা) এবং ভাত ঝরঝরে ও রং সাদা।
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনা খাতুন বলেন, “চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার কৃষকরা ১০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-১০৪ জাতের আবাদ করেন। উৎপাদিত ধান কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কৃষকদের সামনে কেটে মাড়াই ও ওজন করে দেখা গেছে হেক্টর প্রতি এ ধান ৭ দশমিক ২৫ টন ফলন দিয়েছে।
উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৮ দশমিক ৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
এছাড়া ব্রি ধান-১০৪ চাষাবাদে রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক আকবর আলী শেখ বলেন, “একশ’ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করেছি। হেক্টর প্রতি এ ধান প্রায় ৭ দশমিক ৭ টন ফলন দিয়েছে।
“এ ধান বেশি দামে বিক্রি করতে পারব। আমি লাভের টাকা ঘরে নেব। আমি আগামী বছর ৩০০ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ক্ষেতের ধানের ফলন দেখে আশপাশের কৃষক এ ধানের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, “এ ধানের চাষাবাদ কৃষকের আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেবে। তাই আমরা এ ধানের আবাদ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।”