তবে এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Published : 03 Apr 2023, 08:54 PM
র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া নওগাঁর ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের ছেলে এবং ভগ্নিপতির বক্তব্য শুনেছে সংস্থাটির তদন্ত দল।
নওগাঁ জেলা সার্কিট হাউসে সোমবার দুপুর ১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে তদন্ত দলের সদস্যরা।
বক্তব্য দিয়ে বেরিয়ে সুলতানা জেসমিনের ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম ও ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু সাংবাদিকরা মুখোমুখি হলে আমিনুল ইসলাম বলেন, “র্যাবের তদন্ত দল আমাদের ডেকেছিল তাই এসেছিলাম। গত ২২ মার্চ সকালে সুলতানা জেসমিনকে র্যাবের আটক করা থেকে শুরু করে ২৫ মার্চ জেসমিনের দাফন পর্যন্ত যা যা আমরা জানি তাই বলেছি।”
তদন্ত দলের ছয় সদস্য উপস্থিত ছিলেন জানান আমিনুল। এ সময় তার পাশে সৈকত ছিলেন।
এরপর তারা একটি গাড়িতে করে সার্কিট হাউজ ত্যাগ করেন।
তবে এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরে সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, “সুলতানার ছেলে ও ভগ্নিপতিকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে রাজশাহী যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা যেতে রাজি হননি। পরে র্যাব নওগাঁয় এসে তাদের বক্তব্য নিয়েছে।“
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। র্যাব বলছে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত ২৪ মার্চ শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান জেসমিন।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব-৫ রাজশাহীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আটকের পর জেসমিনকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হলে ঢাকায় বাহিনীটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। এই অভিযোগে সেই সচিবের উপস্থিতিতে আটক করা হয় তাকে।
এর মধ্যেই রোববার সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় পাঠানো হয়; যেখানে বলা হয়েছে- “মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে।”
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, “মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথার এক জায়গায় ও হাতে যে আঘাত পাওয়া গেছে সে আঘাত মৃত্যু হওয়ার মত নয়।”
জেসমিনের মৃত্যুর খবর দেখে গত ২৭ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেয়।
আদেশে লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে জেলায় মানববন্ধন করেছে একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
গত ৩০ মার্চ র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, জেসমিনকে আটকের অভিযানে থাকা ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ওই ১১ জনের মধ্যে একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালকও রয়েছেন।
ঘটনা তদন্তে র্যাব সদরদপ্তর কমিটি গঠন করেছে। তারা সেই অভিযানে থাকা বাহিনীটির সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
আরও পড়ুন:
জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তথ্য
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মৃত্যু: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট
র্যাব হেফাজতে সুলতানার মৃত্যুর পর ‘ভেঙে পড়েছেন’ ছেলে
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
র্যাবের আটকের পর ৪ ঘণ্টা জেসমিন কোথায় ছিলেন, প্রশ্ন স্বজনের