ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
Published : 27 Mar 2023, 08:45 PM
নওগাঁ শহরে র্যাবের হেফাজতে যে নারী মারা গেছেন, তার লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে হাই কোর্ট। ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিন নামে ওই নারীর র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর খবর দেখে সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়।
ওই আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ সাংবাদিকদের বলেন, “একজন আইনজীবী নওগাঁর নারীর মৃত্যুর ঘটনাটি হাই কোর্টের নজরে আনেন। আমাকে এই বিষয়ে খোঁজ দিতে বললে আমি আদালতকে অবহিত করি।
“পরে আদালত ওই নারীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সুরতহাল রিপোর্ট দেখতে মঙ্গলবার দিন ধার্য
করেছেন। ওই নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তার পরিচয় জানাতে বলেছেন।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক এই মৃত্যুর ঘটনাটি আদালতের নজরে এনেছিলেন।
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়। তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত ২৪ মার্চ শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জেসমিন।
স্বজনদের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব-৫ রাজশাহীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আটকের পর জেসমিনকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল বলেন, ওই নারীকে ২২ মার্চ দুপুরে নওগাঁ হাসপাতালে আনা হলে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সেদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের দাবি আসক’র
এদিকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সংবিধান, বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটেছে।”
নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার যে দাবি করেছে, সে প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, “এবারই প্রথম এমন অভিযোগ উঠলো তা নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়শ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। অভিযোগগুলো যথাযথ গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।”