মামলার বাদীর অভিযোগ, “টাকার বিনিময়ে আসামি হৃদয়কে পালাতে সহায়তা করেছে পুলিশ। এখন তারা এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে।”
Published : 10 Jan 2025, 05:24 PM
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানা থেকে হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে ‘আসামি পালানোর নাটক’ সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী।
মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই শামীম আল মামুন ও কনস্টেবল মাহফুজ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া ঘটনার তদন্তে বৃহস্পতিবার মুকসুদপুর সার্কেলের এএসপি আব্দুল বাসেতের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় দিকে মুকসুদপুর থানা থেকে পালিয়ে যায় হত্যা মামলার আসামি হৃদয় শেখ (২৫)।
২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে কোনো এক সময় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার দামদরদি গ্রামের শাহা আলম মাতুব্বরের ছেলে আকাশ মাতুব্বর খুন হন।
এ ঘটনায় একই বছরের ৮ মার্চ হত্যা মামলা করেন শাহা আলম মাতুব্বর; যেখানে হৃদয় শেখ ২ নম্বর আসামি।
প্রায় এক বছর পর বাদীর লোকজনের দেওয়া তথ্যে হৃদয় শেখের খোঁজ পেয়ে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে বুধবার রাত ১০টার দিকে মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বুধবার সকালে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতকড়া খুলে কৌশলে পালিয়ে গেছে আসামি হৃদয় শেখ।
মামলার বাদী শাহা আলম মাতুব্বর বলেন, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আমার ছেলে বাড়ি থেকে ভ্যান চালানোর উদ্দেশে বের হয়। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে মুকসুদপুর উপজেলার দুয়ারীডাঙ্গা গ্রামের বক্কার মিয়ার মেহগনিবাগানে নিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
“এরপর মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ইট বেঁধে পুকুরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেহগনি বাগানে আকাশের স্যান্ডেল পাওয়া যায়। ভ্যানটি উদ্ধার করা হয় মুকসুদপুর উপজেলার নারায়নপুর খালিসাকান্দা গ্রামের মইনুদ্দিন মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে লেবু ও লিচু বাগান থেকে ।
তিনি আরও বলেন, “এ ব্যাপারে ৮ ফেব্রুয়ারি নগরকান্দা থানায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এর কিছু দিন পর দুয়ারীডাঙ্গা গ্রামের পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কার করার সময় বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে আকাশের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে।
“এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া আসামি হৃদয় শেখসহ পাঁচজনকে আসামি করে ৮ মার্চ মুকসুদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি।”
শাহা আলম মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, “টাকার বিনিময়ে আসামি হৃদয়কে পালাতে সহায়তা করেছে পুলিশ। এখন তারা এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে। ”
তবে ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, “থানায় যে ঘটনা ঘটেছে এটা একটা দুর্ঘটনা। সে সময়ে যে পুলিশ সদস্য ছিল তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদন্ত হচ্ছে।”
মুকসুদপুর সার্কেলের এএসপি আব্দুল বাসেত জানান, “এ বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমি প্রতিবেদন দাখিল করব।”
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, পালিয়ে যাওয়া আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।
আগের সংবাদ