গত শুক্রবার নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৮২৬ জন কয়েদি, যার মধ্যে নয় জন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। এ সময় ৮৫টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি লুট হয়।
Published : 22 Jul 2024, 06:16 PM
নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এই কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি সারা দেশে নাশকতাকারীদের ধরতে চিরুনী অভিযানের কথাও বলেন।
একই সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে ওঠা যাত্রাবাড়ী এলাকা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত শুক্রবার নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৮২৬ জন কয়েদি, যার মধ্যে নয় জন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। এ সময় ৮৫টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি লুট হয়।
নরসিংদীর কারাগার থেকে পালানো ৬ জঙ্গিসহ ৬৫ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ পর্যন্ত।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন অস্ত্র লুটে জড়িতদের সন্ধান এবং লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার দেওয়া হবে জানিয়ে বলেন, “অস্ত্র লুট হয়েছে। কেউ অস্ত্রধারী ধরিয়ে দিতে পারলে বিশেষ পুরস্কার…অস্ত্র উদ্ধার করে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কারাগারে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। যেহেতু এখানে অনেক ধরনের অপরাধ হয়েছে, ফলে আরও মামলা হবে।”
পুলিশপ্রধান বলেন, “যারা পালিয়ে গিয়েছে তাদের আহ্বান জানাব, তারা যেন স্বেচ্ছায় আদালতে এসে হাজির হয়। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আইজিপি বলেন, “দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তারা সারাদেশে নারকীয় আক্রমণ চালিয়েছে এবং জেলখানাতে নৃসংশতম এই হামলা সংঘটিত হয়েছে।
“যারা এই হামলা ও অপরাধ সংগঠন করেছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রতিটি অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে। দেশের মানুষের জীবনহানি করে তারা কী করতে চেয়েছিল, কী করতে চেয়েছিল তারা এদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে?”
আইজিপির সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক বদিউল আলম, জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
নরসিংদী কারাগার পরিদর্শনের পরে আইজিপি হেলিকপ্টারে করে যাত্রাবাড়ীর কদমতলী এসে নামেন।
এসময় এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজি আতিকুর রহমানসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।
যাত্রাবাড়ী এলাকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সকলে যৌথভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তাদের টার্গেট ছিল পুলিশ, সরকারি স্থাপনা। এখন আর তারা কিছু করেতে পারবে না।”
এসব ঘটনার সাথে জড়িতরা যেখানেই থাকুক, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশে চিরুনি অভিযান চলছে, এই অভিযানে তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই ধরা হবে।
পুলিশ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, তারা সুক্ষ্মভাবে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখার পাশপাশি পুলিশ হত্যার বিষয়ে কিছু বার্তা পেয়েছে, যা তদন্ত করা হচ্ছে।
“কারা ইন্ধন দাতা, কারা অর্থদাতা, কারা এর সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
পুলিশের মহাপরিদর্শক চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও নাশকতা হয়েছে।
“ছাত্ররা কি মেট্রোরেলে হামলা চালাতে পারে? পুড়িয়ে দিতে পারে? সড়কভবন, বিটিআরসি, বিটিভি ভবনে আগুন দিতে পারে? তারা যে নাশকতা করেছে, হত্যা করেছে, তা মধ্যযুগের বর্বরতাকেও হার মানায়।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কারফিউ জারির পর সেনাবাহিনীসহ অন্যরা পুলিশেকে সহযেগিতা করছে।”
স্বাধীনতাবিরোধীরা টাকা দিয়ে লোক নিয়োগ দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে মন্তব্য করে পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, এই অপতৎপরতা চালানোর জন্য ঢাকার বাইরে থেকে লোক এনে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে রাখা হয়।”
“যারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করবে পুলিশ,” বলেন তিনি।