দুই দিন ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেই, বিদ্যুৎহীন বন্যা কবলিত অধিকাংশ এলাকা।
Published : 23 Aug 2024, 08:59 PM
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ভাসছে ফেনী শহর। গোটা জেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দুই দিন ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় গ্রামে থাকা পরিবারের সদস্যদের অবস্থাও জানতে পারছেন না স্বজনরা। অসহায় অবস্থায় অনেকে নাম-ঠিকানা দিয়ে পরিবারের খোঁজ জানতে এবং উদ্ধার তৎপরতার জন্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। তারা চেষ্টা করেও পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, ফেনীতে এমন ভয়াবহ বন্যা আগে কখনো দেখেননি তারা। বিশেষ করে ফেনী শহরে পানি ওঠায় রীতিমতো অবাক সবাই। জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলা বন্যা কবলে পড়েছে।
তবে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম এই তিন উপজেলা পুরোটাই বন্যাকবলিত। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা এখনো বিচ্ছিন্নই বলা চলে। এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
পানিবন্দি মানুষেরা জানাচ্ছেন, তারা খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন।
তবে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শাহ আলম ও তার স্ত্রী পানিবন্দি অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। এই দম্পতির সন্তানরা জেলার বাইরে থাকেন। তারা কয়েক দিন ধরে বাবা-মায়ের কোনো খবর পাচ্ছেন না। তারা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
শাহ আলমের ছেলে আবদুর রহমান বলেন, “চারদিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমি চাকরির কারণে লক্ষ্মীপুর রয়েছি। চেষ্টা করেও বাড়িতে যেতে পারিনি। জানি না বাবা-মা কেমন আছেন? আমার বোনেরা বাবা-মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছেন। এখন আল্লাহই আমাদের একমাত্র ভরসা।”
শুক্রবার সকালে ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্থানেই পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চাষের জমি। অনেক গ্রামে বাড়িঘর খালি পড়ে আছে। বেশিরভাগ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। কেউ কেউ দোতালা ও তিনতলায় আশ্রয় নিয়ে বারান্দা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন।
ভেসে গেছে বেশিরভাগ পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। অনেকে বন্যার পানির মধ্যে মাছ ধরছেন।
এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বুক সমান পানি। এ কারণে যানচলাচল করতে পারছে না।
ফেনী সদরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ৬৫ বছরের জীবনে এত পানি দেখিনি। বিশেষ করে জন্মের পর কখনো দেখিনি ফেনী শহরে বন্যার পানি উঠতে। এবারের মত মহাসড়কে পানি উঠতেও কখনো দেখিনি। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।”
এদিকে জেলা প্রশাসন জানায়, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম—এ তিন উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত। সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামে প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছে। বন্যাকবলিত বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বেশির ভাগ মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এতে সমস্যা আর তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেনী জেলায় ৯২ শতাংশ টাওয়ারই অচল হয়ে পড়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকা এবং টাওয়ার এলাকা ডুবে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক সচল করা যাচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের বেশ কয়েকটি টিম ফেনীতে কাজ করছে। এখনো অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।”