অভয়নগর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরের তিন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে।
Published : 15 Sep 2024, 09:21 PM
দুদিনের টানা বর্ষণে যশোরের অভয়নগরের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমন ধান ও মাছের ঘেরসহ তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়েছে ভবদহ অঞ্চলের ২৮ গ্রামের মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৮ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত অবিরাম ঝরেছে।
কোথাও কোথাও বসতবাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। গবাদিপশু ও মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে।
উপজেলা কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভিটা, সরখোলা, ডুমুরতলা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহটী, বাড়েধা, দীঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গি, বারান্দিসহ ২৮ গ্রামের হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, “অতি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নের বিল সংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েকশ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।”
চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, “এবারের জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলার সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার ইউনিয়ন।”
তিনি বলেন, এখানে মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা।
পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান আত্মগোপনে আছেন। তার ছেলে রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমাণ ফসলি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
এলাকার বাসিন্দা প্রবীর কুমার রায়, আক্তারুজ্জামান, জালাল মোল্যাসহ ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকরা বলেন, অতি বর্ষণ ও উজানের পানির কারণে তাদের হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে।
অভয়নগর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরের তিন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ৫৯০ হেক্টরসহ ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিষয়টি উপরের মহলে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেইটে চারটি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।”
অপরদিকে কেশবপুর পৌরসভাসহ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল দুদিনের টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরিহর নদে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা না থাকায় নদ উপচে এলাকায় পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমন খেতের পাশাপাশি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার মানুষ। পৌর এলাকার মধ্যকুল তেলপাম্প এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই এলাকার বাসিন্দা বাবলুর রহমান বলেন, রোববার তাদের বাড়ির ভেতর পানি ঢুকে হাঁটু সমান হয়েছে। তলিয়ে গেছে ওই এলাকার শেখাপাড়াটিও।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মূলগ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, তাদের বলধালি বিলের প্রায় দেড় বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। ওই বিলের একাধিক কৃষকের আমন খেতসহ মাছের ঘের ডুবে গেছে।
মধ্যকুল গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, তার মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ এলাকায় অনেকের পুকুর তলিয়ে গেছে।
শহরের কাঁচা বাজার আড়তের সভাপতি মশিয়ার রহমান বলেন, বাজারের ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ায় ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালামাল আনা নেওয়া করতে বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টি ও হরিহর নদের উপচে পড়া পানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছে।