“একটি নয়, সাত সাতটি ব্যাংক লুট করা হয়েছে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে,” তিনি বলেন।
Published : 24 Feb 2025, 12:08 AM
রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুটের ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেছেন, “পৃথিবীর কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের সর্বনাশ কোথাও হয়নি।”
রোববার দুপুরে নীলফামারী সরকারি কলেজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাংকিং আইন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্হিবিশ্বের দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা হয়, মূল্যস্ফিতি হয়। তাই বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট হয় না। এ ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটি ব্যাংক নয়, সাত সাতটি ব্যাংক লুট করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে এই সাতটি ব্যাংক লুট করে অর্থ পাচার করা হয়েছে বিদেশে।”
“আপনারা জানেন, একটি পরিবারের হাতেই ছিল সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা আইন বহির্ভূত।
“ইসলামী ব্যাংকের ৮০ পার্সেন্টের ওপর শেয়ার এস. আলম গ্রুপ নামের একটি পরিবারের কাছে। কীভাবে তারা পেল? এটি পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা। তারা হয়েছিল পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর।”
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যাংক লুটকারীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে দাবি করে গভর্নর বলেন, “কীভাবে একটি পরিবার সাতটা ব্যাংক নিল এবং সবগুলোকে ব্যাংককে দেউলিয়া করল, এটা কি আমরা জানতাম না? অবশ্যই জানতাম। কিন্তু কিছু করা সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি, সেটাও আমরা জানি। কারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি এটাকে প্রটেকশন দেওয়া হয়, ডিজিএফআই থেকে প্রটেকশন দেওয়া হয়, তাহলে কীভাবে সাধারণ মানুষেরা প্রতিহত করবে?”
ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কিছু ব্যাংক আছে, যেগুলো ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং কেন দাঁড়িয়েছে? কারণ, ডিপোজিটররা কমিটেড টু দ্য ব্যাংক। তারা চায় তাদের ব্যাংকটা থাকুক। তারা জানে যে, ব্যাংকটা ভালো ছিল। ব্যাংকটা ভালো হতে পারে এবং ব্যাংকটা ভালো হবে। এই যে আস্থা, এই আস্থাটা কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যাংকিং খাতের জন্য যদি আস্থাটা দিতে পারি তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সময় লাগবে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর বলেন, “লাখ লাখ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা অনেকগুলো জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছি। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইউরোপিয় ইউনিয়নের সরকারি সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে আমরা যোগাযোগ করছি। তাদের কাছ থেকে আমরা কারিগরি ও আইনগত সহায়তাও নিচ্ছি।
“আমরা দেখেছি, নাইজেরিয়াতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের যে সম্পদ নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই টাকা ফেরত আনা হয়েছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মত। এটা করা সম্ভব। তবে সময় লাগবে এবং এই সরকারের পক্ষে কিন্তু রেজাল্টটা দেখা সম্ভব নয়। শুরুটা করা সম্ভব, আমরা শুরু করে দিই। কিন্তু শেষটা করতে হবে পরবর্তী সরকারকে।”
আলোচনা সভায় কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
সভায় কলেজ শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।