ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বের হতে না হতেই ওই দুই মহাসড়ক ধরে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা আছে।
Published : 22 Mar 2025, 10:31 AM
এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর অংশের বিভিন্ন স্থানে যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
এ মহাসড়কে চলাচল করা দূরপাল্লার পরিবহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা বলছেন, খানাখন্দ তেমন না থাকলেও রাস্তার দুই পাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট, বাজার, অবৈধ পার্কিং ও ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে সারাবছর যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের। আসন্ন ঈদযাত্রায় এ দুই মহাসড়ক ধরে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
যদিও গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান বলছেন, মহানগর এলাকার সড়ক-মহাসড়ক ধরে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
ঈদের আগেই মহাসড়কগুলোতে অস্থায়ী বাজার, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করা হবে। মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা হবে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করাতে গিয়ে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচল করা ইমাম পরিবহনের চালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের উত্তর প্রান্তে উনিশ টাওয়ারের সামনে থেকে উত্তরের হানিমুন রেস্টুরেন্টের মধ্যবর্তী এলাকায় বিভিন্ন পরিবহনের বাস থেমে যাত্রী উঠা-নামা করানোর কারণে একটা জটলা সৃষ্টি হয়। মাঝে-মধ্যেই যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখান থেকে কিছু পরিবহনের কাউন্টার সরিয়ে দিলে এবং ফ্লাইওয়ের উত্তরের সংযোগস্থলে মহাসড়কে যানবাহন থামতে না দিলে এ থেকে কিছুটা রেহাই মিলবে।”
একই মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা আব্দুল মতিন দুলাল নামে এক যাত্রী বলেন, “গাজীপুর থেকে আমাকে পারিবারিক প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যেতে হয়। যাতায়াতের পথে দেখেছি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু কিছু এলাকায় যেমন- এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার, ভবানীপুর বাজার এলাকায় রাস্তার পাশেই কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। এতে বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালের দিকে যানজটের কবলে পড়তে হয়।
“সঠিক সময়ে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না। ঈদের আগে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ না হলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া তেলিপাড়া থেকে নগরপাড়া এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে পণ্যবহনের অপেক্ষায় থাকা পিকআপ, পণ্যবাহী কভার্ডভ্যান ছাড়াও বালুবাহী ট্রাক অবস্থান করে। এতে চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়।”
ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, “গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা মোড়ের পশ্চিম-দক্ষিণ এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবৈধ ভাসমান দোকানপাট ও মহাসড়কে অবাধে চলা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উচ্ছেদ করা না হলে ঈদে দীর্ঘ যানজটের সম্মুখিন হতে হবে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হবেন।
“বিশেষ করে, ওইসব দোকানে কেনা-কাটা করতে গিয়ে মানুষের ভিড় তৈরি হওয়ায় ও যানজটপ্রবণ চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অটোরিকশা চলতে দেওয়ায় যানবাহন চলাচাল বিঘ্নিত হয়।”
এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে ভোগড়া বাইপাস মোড়ের পশ্চিমে পেয়ারা বাগান এলাকা, নাওজোর, মৌচাক কোনাবাড়ি, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড় ও কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে শিল্প কলকারখানা এলাকায় আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা আছে বলে জানান নাওজোর মহাসড়ক থানার ওসি মো. রইস উদ্দিন।
ভোগান্তির কথা স্বীকার করে গাজীপুর মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবার ঈদে রাজধানী থেকে উত্তরের পথে ঘরমুখো মানুষদের বহনকারী যানবাহন গাজীপুর মহানগরে ঢোকার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থান নিয়ে তাদের বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, “রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢোকার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের টঙ্গীর স্টেশনরোড এলাকার ফ্লাইওয়ের উপরে ‘ওয়াই জংশন’ ও নিচের এলাকায়, টঙ্গী কলেজ গেইট, চেরাগআলী এলাকা, গাজীপুরা (সাতাইশ) এলাকা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা উনিশ টাওয়ারের সামনে, রাজেন্দ্রপুর এলাকায় যাত্রী ও গাড়ির ভিড় বেড়ে গিয়ে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।”
এ বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই তারা কাজ করছেন।
গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানার ওসি সালেহ আহমেদ বলেন, রাজেন্দ্রপুরের উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর চৌরাস্তা এলাকা, বাঘের বাজার ও মেম্বারবাড়ি এলাকায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভবানীপুর চৌরাস্তা মোড় এলাকায় ইউটার্ন থাকায়, বাঘের বাজার এলাকায় রাস্তা কিছুটা সরু হওয়ায় এবং কলকারখানার গাড়ি বেশি যাতায়ত করার ফলে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হওয়ায় গাড়ির গতি হ্রাস পায়। এতে ঈদে সেখানে যানজট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে। মেম্বারবাড়ি এলাকায় একই কারণে মাঝে-মধ্যে যানজট তৈরি হয়ে থাকে।
মাওনা হাইওয়ে পুলিশের ওসি আইয়ুব আলী বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তার সীমানায় গাজীপুরের শ্রীপুরের তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে উত্তরে জৈনা বাজার পর্যন্ত এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, এমসি বাজার এলাকায় যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ এলাকায় কলকারখানা বেশি থাকায় ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ভিড় সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ট্রাফিক) অশোক কুমার পাল বলেন, ঈদে যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ, সেনাসদস্য ডিউটি করবেন। আমাদের নয়টি রেকার সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে, যেন গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে দ্রুত সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, “এ ছাড়া ঈদের আগে গাজীপুরে বিআরটি কড়িডোর ময়মনসিংহমুখি খোলা থাকবে। যেন সহজে ঘরমুখো মানুষবাহী গাড়ি চলে যেতে পারে। অবস্থা বুঝে ঢাকাগামী কড়িডোর বন্ধ রাখা হবে। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছু কিছু স্থানের খানাখন্দ মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টি হলে মহাসড়কের কিছু স্থানে হাঁটু পরিমান পানি জমে যায়। এ জলাবদ্ধতা যেন না সৃষ্টি হয় এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ঈদের আগে সঠিক সময়ে পোশাকসহ সব কলকারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেন যথাসময়ে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হয় এবং ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়া হয়, সেজন্য থানা পুলিশসহ শিল্পপুলিশ নজরদারি করবে।
অশোক কুমার পাল বলেন, “ছিনতাই রোধ ও আইশৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। আমাদের নিজস্ব সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন দিয়েও পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান বলেন, “ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমাদের থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ সব ইউনিট কাজ করবে।”