কারখানাগুলো থেকে লোকমোটিভ ও কোচ মেরামত আরও বেশি ও দ্রুত করা গেলে বেশি কোচ চলবে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে, বলেন উপদেষ্টা।
Published : 22 Nov 2024, 11:57 PM
রেলওয়েকে লোকসানি খাত উল্লেখ করে এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেছেন, “রেলওয়ের মূল সংকট হচ্ছে, রাজস্ব নাই। আপনারাতো দেখেছেন, একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান কী করে, লোক ছাঁটাই করে।
“এর মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি, যেন রেলের জনবল এবং বাজেট বাড়ানো যায়। কিন্তু একইসঙ্গে রেলের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদেরও কাজ করতে হবে, রেলের রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে। রেল কারখানাগুলো থেকে লোকমোটিভ ও কোচ মেরামত যেন আরও বেশি এবং দ্রুত বের করা যায় তবেই বেশি কোচ চলবে, সেইসঙ্গে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।”
শুক্রবার বিকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শন শেষে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
রেলের নতুন কোনো কারখানা স্থাপন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, যেসব কারাখানা রয়েছে, সেগুলোকে আরো আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলা। আমরা নতুন কিছু না করে বরং পুরনোগুলোকে আরো আধুনিকায়ন করে কীভাবে কার্যকর করা যায় সেই চেষ্টাই করছি।”
রেলের লোকোমটিভ ও কোচ ক্রয় ব্যয়বহুল মন্তব্য করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আরো বলেন, “আমাদের এখন রেলের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে লোকোমটিভ। যেটা ইঞ্জিন, যেটা দিয়ে গাড়ি চলে। আর হচ্ছে, যাত্রীবাহী কোচ ও পণ্যবাহী ওয়াগান সংকট। এজন্য আমরা সৈয়দপুর ও পাবর্তীপুর রেল কারখানা দেখতে এসেছি।
নতুন লোকোমটিভ, যাত্রীবাহী কোচ ও পণ্যবাহী ওয়াগান সংগ্রহ করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল জানিয়ে তিনি বলেন, “তাই আমরা এই কারাখানাগুলো পরিদর্শন করে দেখছি যে, এখানে এগুলো বাড়ানো যায় কিনা। মানে, এখানে লোকোমটিভ এবং যাত্রীবাহী কোচ ও পণ্যবাহী ওয়াগান মেরামত করে আরো বেশি কার্যকর করা যায় কিনা সেটাই দেখার জন্য এসেছি। এখানে এসে দেখা গেছে যে দুটোই করা সম্ভব।”
তার অভিযোগ, “কিন্তু এটি ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পরও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না।
“দেখবেন, এতো বড় ফেসিলেটিজে যা হয়, তা আমাদের প্রয়োজনই হয় না। যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাতে পাবর্তীপুর লোকোমটিভ কারখানায় বছরে ৭০টি লোকোমটিভ মেরামত হওয়ার কথা কিন্তু হচ্ছে বড়জোড় ৩০টি, যা পর্যাপ্ত নয়।
তিনি বলেন, “আর সৈয়দপুর কারখানায় বছরে অর্ধেক কোচ মেরামত হওয়ার কথা থাকলেও তার থেকেও অনেক কর্ম মেরামত হচ্ছে। এজন্য আমাদের মেরামত কাজ আরো বাড়াতে হবে। কারাখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের লোকবল ও বাজেট সংকট থাকায় তারা পারছে না। আমরা চেষ্টা করব, তাদের লোকবল ও বাজেট সংকট সমাধানের।”
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনের আগে জুমার নামাজের পর ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় নিহত সৈয়দপুরের সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এর আগে তিনি সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে নেমে বেলা ১১টায় নীলফামারী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
সেখান থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় রেলওয়ের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা পরিদর্শন শেষে সৈয়দপুরের কারখানা পরিদর্শনে আসেন।
তিনি বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটা জোরের জায়গা। আমরা আগামী সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০টি প্রকল্পের জন্য টেন্ডার আহ্বান করব।
“আমাদের যে সমস্যা, এটি বিদ্যুতের না। সমস্যাটা হচ্ছে জ্বালানির। আমাদের গ্যাস নেই, ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। ফলে আমরা প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করি। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রিনুঅ্যাবেল এনার্জি (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) অর্থাৎ নবায়নযোগ্য শক্তি।”
তিনি বলেন, “সূর্যের আলো আমাদের কিনতে হয় না। কিন্তু গ্যাস-কয়লা কিনতে হয়। এগুলো আমাদের দেশে হয় না; বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিদেশ থেকে কিনতে হয়। এজন্য সৌরবিদ্যুৎ এবং অন্য রিউনুঅ্যাবল এনার্জি, যদি বায়ো বিদ্যুতের সুযোগ থাকে কিংবা যদি হাইড্রোর সুযোগ থাকে, এগুলো আমাদের জন্য সুবিধাজনক।”
রেলের কর্মকর্তাদের নির্ভরশীলতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মর্ডানাইজেশন প্রজেক্ট করার পাশপাশি এ এলাকার চারটি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে অন্তত ৫০ করে ২০০ মেগাওয়ার্ডের প্রকল্প স্থাপন করতে পারলে আর কারো ওপর নির্ভর করতে হবে না।”
সৈয়দপুরে রেলওয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারি জমি ব্যবহারের একটি নিয়মনীতি আছে। কেউ জোর করে ব্যবহার করবেন, এটি এখন আর সম্ভব না।”
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সচিব ফাহিমুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফজাল হোসেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদার ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু রায়হান, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমসহ রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীর আরইবি ও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা ছিলেন।