Published : 28 Oct 2022, 05:06 PM
পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে গাইবান্ধার নেতাকর্মীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিকল্প বাহনে রংপুরের পথে রওনা দিয়েছেন। অনেকে অবশ্য বৃহস্পতিবারই রংপুরে পৌঁছে গেছেন।
বিএনপির নেতারা জানান, বৃহস্পতিবার অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক বাসে করে রংপুরে গেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে কেউ মোটরসাইকেল, কেউ অটোরিকশা, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রংপুর যাচ্ছেন।
শুক্রবার সকাল ১১টায় গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল ইসলাম সাদিক বলেন, “শনিবার রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশে গাইবান্ধার সাত উপজেলা থেকে অন্তত ২৫ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক যোগ দিবেন বলে আশা করছি। আরও বেশি হতে পারে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপির গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।”
“খুলনা ও ময়মনসিংহের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি আঁচ করেছি। তাই নেতাকর্মীরা আগে থেকেই রংপুরে গেছেন। সেখানে তারা পরিচিত নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বা হোটেলে থাকবেন।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে বিএনপির আন্দোলন দমানো যাবে না। কাল গণসমাবেশ দেখেই সরকার বুঝতে পারবে, বিএনপি কত জনপ্রিয়। কালকের গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আমরা আশা করছি।”
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহসাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষকদলের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন দেখে দেশে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির গণসমাবেশগুলো তা প্রমাণ করে।”
তিনি বলেন, “পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে, মামলা-হামলা করে বিএনপির আন্দোলনকে থামানো যাবে না। কালকের গণসমাবেশে আমরা দলে দলে যোগ দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছি। কাল কোনো নেতাকর্মী গাইবান্ধায় থাকবে না। কালকের অবস্থান হবে রংপুরে।”
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছামছুল হাসান ছামছুল মুঠোফোনে বলেন, “আমরা জানি, পরিবহন ধর্মঘট হতে পারে, তাই গতকালই (বৃহস্পতিবার) বাসে করে রংপুরে এসেছি। এখানকার এক নেতার বাড়িতে উঠেছি।”
একই উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের বিএনপির নেতা শাহরুল হুদা শুক্রবার দুপুরে বলেন, “বাসে করে সাদুল্লাপুর থেকে রংপুরে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। শনিবার সকালে অটোরিকশায় গেলে হয়তো ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো না। তাই সকালে ৯টায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রওনা দেই। প্রায় তিন ঘণ্টায় রংপুর পৌঁছেছি।”
“এখানে আবাসিক হোটেলে সিট ফাঁকা পাইনি। তাই আজকের রাতটা ছোট ভাইয়ের সাথে এখানকার এক ছাত্রাবাসে থাকবো। কাল এখান থেকে গণসমাবেশে যোগ দিতে সুবিধা হবে।”
গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জামিরুল মিয়া বলেন, “শনিবার ভোরে অটোরিকশায় যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অটোচালক রংপুরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বিকল্প পথে রংপুরে যাবো।”
শুক্রবার আরও কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা রংপুরে গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা জানান।
এদিকে নেতাকর্মীরা রংপুরে যাওয়ায় স্থানীয় বিএনপি কার্যালয় ফাঁকা পড়ে আছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় গাইবান্ধা শহরের সার্কুলার রোডস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, কার্যালয়ে তালা। কেউ নেই। অন্যান্য দিন, বিশেষত বন্ধের দিন এ সময় বিএনপি কার্যালয় জমজমাট থাকে।
পাশ্ববর্তী এক চায়ের দোকানি বললেন, “অফিসে কেউ নাই। সবাই রংপুরে যাচ্ছেন।”
অপরদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গাইবান্ধা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। অনেক যাত্রী বসে আছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা গ্রামের ব্যবসায়ী আহসান কবির বলেন, “আমি প্রতি শুক্রবার মালামাল ক্রয় করতে বগুড়া যাই। সেখানে থেকে পরদিন মালামাল নিয়ে আসি। আজ বাস টার্মিনালে এসে দেখি, বাস বন্ধ। শুনলাম পরিবহন ধর্মঘট। বাধ্য হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা দিলাম। ভেঙে ভেঙে বগুড়া যেতে হবে।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন বলেন, “মহাসড়কে নসিমন, অটোরিকশাসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে রংপুর বিভাগীয় কমিটি ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা আমাদেরকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানালে আমরাও ধর্মঘটের ডাক দেই।”
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।
আরও পড়ুন:
বিএনপির সমাবেশ: এবার রাজশাহী থেকে রংপুরের বাস বন্ধের ঘোষণা
বিএনপির সমাবেশের আগে রংপুরে বাস বন্ধ, ভোগান্তি
রংপুরে বিএনপির সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক
বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘটের ডাক