Published : 28 Oct 2022, 01:56 PM
রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে দুই দিনের বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে; এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
রংপুর মোটর মালিক সমিতির ডাকে শুক্রবার সকালে থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘট নগরীর কলেক্টর মাঠের শনিবারের গণসমাবেশকে উদ্দেশ্য করেই বলে অভিযোগ রয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
যদিও পরিবহন মালিক সমিতির দাবি, তারা মহাসড়কে নসিমন-করিমন বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় রংপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা বাসের জন্য এসে বসে আছেন। কিন্তু কোনো পরিবহন নেই। সব বাস কাউন্টার বন্ধ। ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে আবার তারা ফিরে যাচ্ছেন। কেউ-বা বিকল্প যানের সন্ধান করছেন।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দু-একটি বাস সকালে নগরীতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু রংপুর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের পাশাপাশি আন্তঃজেলা পরিবহনের বাসও বন্ধ রয়েছে। রংপুর থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না। অন্য জেলা থেকেও বাস আসছেও না।
বগুড়ার সাতমাথা এলাকার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন কাঁচামাল নিয়ে রংপুর পৌরবাজারে এসেছিলেন। তিনি বগুড়ায় চলে যাবেন কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় তাকে ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে।
সকালে নগরীর মর্ডান মোড় এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, “ভাই, আমরা জনগণ কাঠের পুতুল, আমরা সবসময় ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।”
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুর থেকে মেয়ের বাসায় বেড়াতে বসেছিলেন রফিকুল ইসলাম। এখন বাড়ি ফেরার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন কোনো গাড়ি নেই। বাধ্য হয়েই তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই রফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস বন্ধ জানলে আসতাম না। এখন এসে বিপদে পড়লাম।”
এসআর পরিবহনের একজন চালকের সহকারী (হেলপার) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস বন্ধ থাকায় এখানে থাকা-খাওয়ার যে খরচ তা পাব না। গাড়ি না চললে টাকাও নেই।”
জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা ও মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশের আট বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রংপুরে এবং আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। রংপুরের মতো গণসমাবেশের একদিন আগ থেকে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ পথের সব বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর খুলনার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও সেখানকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা একই দাবিতে বাস ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে দুদিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় গণসমাবেশমুখী নেতাকর্মীদের পাশাপাশি চাকরিজীবী, চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
পরিবহন মালিক সমিতির ডাকে বাস ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছিল ১৫ অক্টোবরের ময়মনসিংহের বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও।
বিএনপি একে ক্ষমতাসীন দলের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করলেও আওয়ামী লীগের দাবি, তারা রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
অপরদিকে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করে, তাদের ডাকা ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির গণসমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন:
বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগে ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘটের ডাক