Published : 04 May 2025, 10:50 AM
প্রকৃতি যখন তার রঙের ডালি খুলে দেয়, তখন কালো পিচের পথই যে হয়ে ওঠে নজরকাড়া ক্যানভাস। এই গ্রীষ্মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ হয়ে উঠেছে তেমনই এক জীবন্ত শিল্পকর্ম।
দেশের অন্যতম ব্যস্ততম এই মহাসড়ক ঋতুভেদে যাত্রীদের চোখে ধরা দিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। বসন্তে যে রাজপথ পলাশের আগুন রংয়ে পুড়েছিল; সেটাই গ্রীষ্মের দাবদাহে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া আর জারুলে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। দেখে মনে হয়- কোনো ফুলেল রাজপথ- যেখানে প্রকৃতি নিজেই যাত্রী।
কুমিল্লার বাসিন্দা গল্পকার কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, “সোনালু-জারুলে ঢাকা এই রাজপথ শুধু চলার নয়, প্রকৃতিকে উপলব্ধির এক অনন্য পথও বটে। আকাশ থেকে দেখলে মনে হয় ফুলের রাজপথ।
“সম্প্রতি ড্রোন ক্যামেরায় তোলা এই মহাসড়কের ভিডিও দেখে খুবই অবাক হয়েছি। প্রকৃতি কতটা কাব্যিক হতে পারে, তা এ পথে না এলে বোঝা যায় না।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ফেনী পর্যন্ত এ মহাসড়কে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুল প্রভৃতি।
এরকম ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলোর উচ্চতা দুই থেকে পাঁচ মিটার।
এ ছাড়া সড়কের ঢালে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, হরিতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।
এসব গাছ দিনে মহাসড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি আর রাতে বিপরীতমুখী গাড়ির হেডলাইটের আলো নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনারোধেও ভূমিকা রাখছে।
ঋতুর আবর্তনে প্রকৃতিতে এখন চলছে গ্রীষ্ম। তাই এসব গাছের মধ্যে এখন সোনালু, লাল সোনাইল, কৃষ্ণচূড়া আর জারুল গাছ জুড়ে ফুটেছে ফুল। এতে মহাসড়কের আকাশ ঢেকেছে গোলাপী, হলুদ আর বেগুনী রঙের ছাউনিতে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে চলাচলের সময় গাড়ির জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যায় শত শত গাছে ফুটে আছে দুই রঙের সোনালু আর জারুল। মাঝে মাঝে কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে।
মনে হয়, ফুলের রাজ্যে উৎসব চলছে। সেই উৎসবে সামিল হতে তাই অনেকেই চলার পথে হুট করে থেমে যান। কখনো গোলাপি রঙের লাল সোনাইলের সঙ্গে, কেউ আবার স্বর্ণালী সোনালুর ফুলের সঙ্গে নিজের ছবি তুলে নেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন কাজে প্রায়ই ঢাকা-কুমিল্লা আসা যাওয়া হয়। মহাসড়কে যেতে যেতে ফুল দেখে ভ্রমণের ক্লান্তি ভুলে যাই। বিশেষ করে মহাসড়কের দাউদকান্দি, চান্দিনা, কোরপাই, মাটিয়ারা, মিয়াবাজার এলাকায় ফুল গাছের যে আধিপত্য- তা আসলেই অসাধারণ।
“ফুলওয়ালা রাস্তা শেষ হলেই শুরু হয় আক্ষেপ। পুরোটা মহাসড়ক যদি এমন গাছে ছেয়ে থাকতো! ”
কুমিল্লার ন্যাচার ফটোগ্রাফার মালেক খসরু উষা বলেন, “এখন মহাসড়কে গেলে কোথাও সোনালী রঙের সোনালু ফুলের ভিড়, আবার কোথাও গোলাপি রঙের লাল সোনাইল।
“এরপরই আপনি কোথাও কোথাও দেখবেন একটানা জারুলের বন। মাঝে মাঝে পুরো গাছ ভর্তি করা লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া। পুরো পথটাই যেন কাব্যিক। গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে আমাদের সৌভাগ্য হয় এমন রূপ দেখার।”
সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপর বিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় থেকেই সড়ক বিভাজকের বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়। সেগুলো পরিচর্যা করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
“তবে অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় গাছ মরে যায় বা কেউ কেটে নিয়ে যায়, আমরা সে জায়গাগুলোতে আবারো গাছ লাগানোর জন্য প্রকল্প নেই। যাতে অসাধারণ সৌন্দর্যের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে আমরা প্রতি ঋতুতেই ভিন্নরূপে দেখতে পাই।”
পুরানো খবর-