Published : 25 Feb 2025, 06:49 PM
আগুন রাঙা পলাশ ফুল জানান দেয়, বসন্ত এসে গেছে। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে লাগে পলাশের ছটা।
এ বসন্তেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় সড়ক বিভাজকে সারি সারি গাছে পলাশ ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। এ পথে গাড়িতে চলতে চলতে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন যাত্রীরা। যা থেকে বাদ যায় না পথচারীরাও।
মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি পলাশ ফুলের গাছ দেখা যায়। এখান থেকে শুরু করে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে শত শত পলাশ গাছের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মন ভরে দেখতে দূরপাল্লার যানবাহনও গতি কমিয়ে দেয়।
অনেকেই ব্যক্তিগত যানবাহন থামিয়ে ছবি তোলেন। পলাশ ফুলের এমন মোহনীয় রূপ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন।
এই মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী শিক্ষিকা নূরজাহান আক্তার বলেন, “চাকরির কারণে প্রতিদিন শহর থেকে চৌদ্দগ্রাম আসতে হয়। মিয়াবাজার এলাকায় পলাশ ফুল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। ব্যস্ততার কারণে বসন্তের কথা ভুলে গেলেও এ পলাশ ফুল মনে করিয়ে দেয় বসন্ত এসে গেছে।”
ফেনী থেকে কুমিল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক রমজান মিয়া বলেন, “গাড়ি নিয়ে মিয়াবাজার হাইওয়েতে এলে অনেক যাত্রী গাড়ির জানালা দিয়ে পলাশ ফুলের ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। আমিও গাড়ির গতি কমিয়ে দেই তখন। সড়কে এমন ফুল দেখে নিজেরও মন ভালো হয়ে যায়।”
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রভাষক রাবিনা ইসলাম বলেন, “পলাশ বসন্তের ফুল। পাতাহীন উঁচু উঁচু ডালে ফুটে থাকে পলাশ। এটি তার ফুলের জন্য পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘বুটিয়া মনোস্পার্মা (Butea monosperma)। পলাশ ফুল লাল, লালচে কমলা, হলুদ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। শীতে পাতা ঝরে গেলে এর কলি ফোটে। এরপর ফুল হয়। একেকটি গাছ প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর বাকল ধূসর। শাখাপ্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা।”
তিনি বলেন, “এই গাছের নানা ওষুধি গুণও রয়েছে। বসন্তে গাঁটের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে এই ফুল ব্যবহার করেন। পলাশ গাছের ছাল, পাতা ও বীজ নানা রোগ সারাতে কাজে লাগে। চর্মরোগ, জ্বর, ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে।”
সংবাদকর্মী আবুল বাশার রানা বলেন, “সারি সারি পলাশ গাছের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না। আমাদের সবার উচিত মহাসড়কের আশপাশে যেসব গাছ আছে সেগুলোকে যত্নে রাখা। তাহলে ঋতু ভেদে মহাসড়কের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।”
তিনি বলেন, “এক সময় এই পলাশ গাছ ও ফুল গ্রামাঞ্চলের আঁকাবাঁকা সড়কের মোড়ে, বাগানে বা যত্রতত্র দেখা মিললেও এখন বিলুপ্ত প্রায়। পলাশের নাম জানেন না এমন লোক পাওয়া যেমন দুষ্কর তেমনি এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা পলাশ ফুল চিনেন বা দেখেছেন এমন সংখ্যাও খুবই অপ্রতুল।”
সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমরা মহাসড়কের সড়ক দ্বীপের গাছগুলোকে পরিচর্যার জন্য আলাদা জনবল রেখেছি। চেষ্টা করছি, সৌন্দর্যবর্ধক এ সব ফুল গাছগুলোকে যেন যত্নে রাখা যায়।”
তিনি বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হওয়ার পর সড়ক বিভাজকে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়। সৌন্দর্যবর্ধন ও বিভাজকের মাটি আটকে রাখার জন্য ওই গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে পলাশও আছে। বসন্তে পলাশ ফোটে।”