Published : 29 Apr 2025, 05:46 PM
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহরাজ ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মাইন উদ্দিন দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। আসামির আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বনানী থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন।
পারভেজ হত্যা মামলায় গত ২৩ এপ্রিল রাতে গাইবান্ধা থেকে প্রধান আসামি মেহরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ এপ্রিল তার পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দেয় আদালত। অপরদিকে হৃদয় মিয়াজীকে ২১ এপ্রিল কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২৩ এপ্রিল তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
মামলায় গ্রেপ্তার মাহাথির হাসান ও মো. আল কামাল শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা এখন কারাগারে। অপরদিকে গ্রেপ্তার আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন। মামলাটিতে মোট ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ঢাকার বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ১৯ এপ্রিল টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ ছুরিকাঘাতে খুন হন। পরদিন সকালে তার চাচাত ভাই হুমায়ুন কবীর আটজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেহরাজ ও তার সঙ্গীরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে পারভেজের ওপর হামলা চালায়।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকানে খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিলেন পারভেজ। সেসময় তাদের পেছনে দুজন অন্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। একপর্যায়ে মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজসহ তিনজন এসে পারভেজের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চান। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, পরে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক এসে দুই পক্ষকেই প্রক্টরের রুমে ডেকে নিয়ে মীমাংসা করে দিলে মেহরাজসহ তার সঙ্গীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরে আসামিরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ধাওয়া করে পারভেজ ও তার বন্ধু তারিকুল ইসলামকে মারধর এবং পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করে।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, “মেহরাজ ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তার বুকের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে।”
মামলার আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এদের ছাড়াও নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে হৃদয় মিয়াজী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষারও এ হত্যা মামলার আসামি।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানীর কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন; ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।
আরও পড়ুন-
পারভেজ হত্যা: প্রধান আসামি মেহরাজ ৫ দিনের রিমান্ডে
প্রাইম এশিয়ার ছাত্র খুনের মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ২ নেতা আসামি
পারভেজ হত্যা: রিমান্ড শেষে দুই আসামি কারাগারে
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের 'কতিপয়ের' আচরণ 'রক্ষীবাহিনীর' মত: ছাত্রদল