সকালে এই পাঁচ শিক্ষক যশোর শিক্ষা বোর্ডে হাজির হলেও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।
Published : 10 Nov 2022, 09:09 PM
ঢাকা বোর্ডের এইসএসসির বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ‘বিতর্কিত প্রশ্নপত্র’ তৈরিতে যুক্ত পাঁচ শিক্ষকের বক্তব্য নিয়েছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।
এই পাঁচ শিক্ষককে বৃহস্পতিবার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ডাকা হয় এবং সকালে তারা শিক্ষা বোর্ডে আসেন।
বিভিন্ন কলেজের বাংলা বিভাগের এই শিক্ষকরা হলেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন ও মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ।
গত রোববার উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয় এদিন। ঢাকা বোর্ডের ১১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নে সনাতন ধর্মের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয় তুলে ধরা হয়। এই প্রশ্ন নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
বিষয়টি ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেন, কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্ন করতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া থাকে শিক্ষকদের। সাম্প্রদায়িকতার কিছু যেন না থাকে, সেটাও সেই নির্দেশিকায় আছে।
এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যশোর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানীর নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্র্শক মদন মোহন দাশ ও বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।
কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান কে এম রব্বানী বলেন, “আমরা তাদের বক্তব্য শুনলাম। প্রয়োজন হলে তাদের আবার ডাকা হবে। আগামী মঙ্গলবার তদন্তের শেষ দিন। পরে বুধবার আমরা তদন্ত প্রতিবেদন লিখিত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।”
তার কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রশ্ন তৈরিতে যুক্ত পাঁচ শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়া হয় তিনি জানান।
তবে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলেননি তদন্ত কমিটির প্রধান।
সকালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে এই পাঁচ শিক্ষককে দেখা যায়। তবে তারা গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সকালে তারা তদন্ত কর্মকতার কক্ষে প্রবেশ করেন।
দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে প্রথমে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন প্রশ্ন প্রণয়নকারী ডা. সাইফুল ইসলাম কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি। এ বিষয় আর কিছু বলার নেই।”
এ কথা বলেই তিনি শিক্ষা বোর্ড ত্যাগ করেন। এরপর একে একে প্রশ্নপত্র পরিশোধনকারী দলের চার সদস্য বেরিয়ে আসেন।
বেলা ২টা ১৬ মিনিটে বের হন সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান।
তার নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কোনো কথা বলতে চাননি। কিছু সময় পর বলেন, “আমার নাম পরাগ; আমি অন্য কাজে এসেছি।”
তবে কাজটি কী জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
রেজাউল করিম, শফিকুর রহমান, সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন ও শ্যামল কুমার ঘোষও এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি।
কে এম রব্বানী আরও জানান, তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্র্শক মদন মোহন দাশ ও বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নে ১১ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্নে বলা হয়: নেপাল ও গোপাল নামের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছোট ভাই নেপাল তার বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামের একজনের কাছে একাংশ জমি বিক্রি করে দেন। আব্দুল সেই জমিতে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং কোরবানির ঈদে সেখানে গরু কোরবানি দেন। এতে জমি বিক্রেতার ভাইয়ের মন ভেঙে যায়, তিনি জমি-জমা সব ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান।
বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার পরই আলোচনা শুরু হয়। সরকার যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এই প্রশ্ন তার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সেই প্রশ্ন ওঠে।
প্রশ্নপত্রটি প্রণয়ন করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।
সেটি মডারেট করেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন: