গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শতাধিক খাল দখল করে প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
Published : 29 Jun 2024, 07:54 PM
বিল বেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় শতাধিক খাল দখলে নিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।
ফলে কৃষি কাজ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা ওইসব এলাকার মৎস্যজীবীরাও পড়েছেন বিপাকে।
দখল হয়ে যাওয়ায় ওইসব খালে নামতে না পেরে তারা তাদের পেশা হারাতে বসেছেন।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী দখলকৃত খালগুলো দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলায় ৩৩৪টি খাল, ২২৯টি বিল, ১০টি নদী ও ছয়টি বাওড় রয়েছে।
এর মধ্যে কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগরের বিল, রুথিয়ারপাড় বিল, মাছপাড়ার বিল, কুমুরিয়া বিল, বৈকণ্ঠপুর বিল, লখন্ডার বিল, মুশুরিয়ার বিল, পিড়ারবাড়ি বিল, পলোটানা বিল, ধোরাল বিল, চিথলিয়ার বিল, পশ্চিম দিঘলিয়ার বিল, পূর্বপাড়া বিল, চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম বিল, সাতুরিয়ার বিল, কান্দি বিল, আশুতিয়ার বিল, পোলশাইল বিল, বর্ষাপাড়া বিল, ছত্রকান্দা বিল, দেওপুরা বিল, সোনাখালি বিল, ফুলবাড়ি বিল, কোনের বাড়ি বিল, বহলতলী বিল, চাটখালির বিল, তারাইল বিল, গোপালপুর বিল, চরগোপালপুর বিল, গৌতমেরা বিল, মাচারতারা বিল, গজালিয়া বিল, তালপুকুরিয়া বিল, হিজলবাড়ি বিল, তারাকান্দর বিল, কুঞ্জবন বিল, পারকোনা বিলসহ ছোট- বড় ১০০ বিল রয়েছে।
শুষ্কু মৌসুমে এসব বিল-বাওড় থেকে শতাধিক খাল হয়ে নদীতে নেমে যায় পানি।
এ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিকভাবই হাজার হাজার টন দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ উৎপাদিত হয়। এ পানি দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া হয়। পানির বহুমাত্রিক ব্যবহার করে উপকৃত হন কোটালীপাড়াবাসী।
তবে বহুদিন ধরে উপজেলার শতাধিক খাল দখলে নিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন বহলতলী গ্রামের পরশ সিকদার, সোনাখালি কুমলাবতী খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য লায়েক শেখ, তারাইল খালে মাছ চাষ করছেন নির্মল মাঝি, ফুলবাড়ি খাল দখল করেছেন ইউছুব আলী দাড়িয়া, কোনেরবাড়ি খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন মুজিবুর রহমান শেখ, কুঞ্জবনের খাল দখলে করে রেখেছেন বিপুল বাড়ৈ।
এসব খাল দখলের কারণে আশপাশের এলাকার কৃষকদের কৃষি কাজ বাঁধার মুখে পড়েছে। বিপর্যস্থ হচ্ছে বিলের পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দাবি, এসব মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে তারা মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে তাদের পেশা হুমকির মুখে পড়েছে; পরিবার-পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী সুরেশ বাড়ৈ বলেন, আগে তারা এলাকার খাল-বিল থেকে দেশীয় মাছ ধরে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন। এই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলত। এখন এসব খাল-বিল থেকে মাছ ধরতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছেন।
তবে খাল দখলকারী পরশ সিকদার, লায়েক শেখ, নির্মল মাঝি বলেন, খালগুলো এখন আরও কোনো কাজে আসে না। তাই বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খাল সংলগ্ন বিলের জমি ঘের দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
তাদের দাবি, মাছ চাষের লাভের টাকার ভাগ জমির মালিককে দেওয়া হচ্ছে। ধান চাষের আগে জমির মালিককে জমি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। সেখানে জমির মালিকরা ধান চাষ করেন। এতে প্রতি বছর এ উপজেলায় মাছের উৎপাদন বাড়ছে।
উপজেলা দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, “উপজেলার ছোট-বড় শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন কিছু লোক। এতে দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব খাল দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে চারটি খাল উদ্ধার করেছি। এছাড়া খাল দখলের দায়ে একজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। খাল উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
কোটালীপাড়া উপজেলার সব খাল দখলমুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করতে পারবেন। পরিবেশ, জীববৈচিত্র, জলাবদ্ধতা থেকে ফসল সহ দেশীয় প্রজাতির মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা হবে।”