“সুনামগঞ্জে শহররক্ষা বাঁধ জরুরি। নাহলে প্রতিবছরই এই সমস্যায় মানুষকে ভোগাবে।”
Published : 19 Jun 2024, 01:12 PM
হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে সুনামগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। কোরবানির ঈদের মধ্যে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিনই সুনামগঞ্জ শহরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিকালের দিক থেকে শহরের উত্তরাংশের সুরমা নদীর তীরবর্তী জনপদ থেকে পানি কিছুটা নামতে দেখা যায়। এ সময় দক্ষিণ-পূর্বাংশে দেখার হাওরের তীরবর্তী এলাকায় পানি বাড়া অব্যাহত ছিল।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত শহরের পুরাতন বাসস্টেশন, পৌর মার্কেট, ডিএস রোড ছাড়া প্রতিটি এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ছিল। এতে মূল্যবান জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বন্যার ভয়ে সুনামগঞ্জ শহরের আব্দুজ জহুর সেতুর দুই পাশে হাজার হাজার যানবাহন জড়ো করে রাখা হয়েছে। যাতে পানিতে ডুবে যানবাহন নষ্ট না হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, মনু-খোয়াই ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নেত্রকোণা ও মৌলভীবাজারের নিচু এলাকাও বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে চেরাপুঞ্জির অবস্থান। সেখান থেকে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে পানি নেমে আসতে চার ঘণ্টা এবং সুনামগঞ্জ শহরে আসতে লাগে ছয় ঘণ্টা।
সুনামগঞ্জের মধ্যবাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ব্যবসায়ী বিকাশ দাস বলেন, “আমার গোদামের মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। সার, বীজসহ অনেক জিনিস ছিল। সকালে দোকান খোলার আগেই সব ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। মধ্যবাজারের সব ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
মধ্যবাজারের রায় স্টোরের পরিচালক চন্দন রায় বলেন, “আমাদের বাসাবাড়িতে পানি। দোকানেও পানি। বাসা ও দোকান সমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার সকালে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই এই ক্ষতি হয়েছে। তবে বিকালে পানি কিছুটা কমেছে।”
তিনি বলেন, “সুনামগঞ্জে শহররক্ষা বাঁধ জরুরি। নাহলে প্রতিবছরই এই সমস্যায় মানুষকে ভোগাবে। তাছাড়া শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত খালগুলোও খনন ও উদ্ধার জরুরি।”
উকিলপাড়ার মনোহরি ব্যবসায়ী গীতা দাস বলেন, “আমরা বাসায় ঘুমে ছিলাম। সকালে আরেকজন ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল, আমাদের দোকানে পানি ঢুকে গেছে। তাড়াতাড়ি স্বামী-সন্তান নিয়ে এসে দেখি দোকানের বিস্কুট জাতীয় পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “উকিলপাড়ার সব বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি। এতে আমাদের সবার কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। মানুষের নানামুখী সমস্যা হচ্ছে।”
উত্তর আরপিননগরের পত্রিকা বিক্রেতা হাম্মাদ আহমদ বলেন, “আমাদের পাড়ার একতলা বিশিষ্ট সব বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি। সাহেববাড়ি ঘাট পুরোটাই ডুবে আছে। মানুষ গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকছে। তবে সেখানে থাকা ও খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে।”
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আহমদ নূর বলেন, পৌর শহরের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাই মঙ্গলবার সকালে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেকের বাসা ও দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
“আমরা বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠার কথা বলেছি। তবে বিকাল থেকে শহরের উত্তরাংশের জনপদ থেকে পানি কমে দক্ষিণ-পূর্বাংশে বেড়েছে। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি আমরা।”
মঙ্গলবার রাত ১০টায় সুনামগঞ্জ শহরের আব্দুজ জহুর সেতুতে দেখা যায়, দুই দিকে গাড়ির বহর। গাড়ি যাতে ডুবে ইঞ্জিন নষ্ট না হয় সেজন্য উঁচু স্থান হিসেবে সেখানে রাখা হয়েছে।
একটি গাড়িতে চালক জাহাঙ্গীর মিয়াকে দেখা গেল তার সাত বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বসে আছেন।
তিনি বলেন, “গাড়ি পাহাড়া দেব আর মেয়েকে নিয়ে রাতে গাড়িতে থাকবো। কারণ বাসায়ও পানি উঠার সম্ভাবনা আছে।”
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “মঙ্গলবার সকাল থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে পানি বাড়লে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট প্লাবিত হয়। ডুবে যায় সড়ক। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে খুলে জনগণকে সেখানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।”