সাত দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর এক ঘণ্টার ব্যবধানে মা-ছেলের মৃত্যু হয়।
Published : 17 Apr 2025, 10:36 PM
পঞ্চগড়ে পারিবারিক কলহের জেরে সন্তানকে বিষ খাওয়ার পর নিজে খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে মা-ছেলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যায় বলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী জানান।
নিহতরা হলেন, পঞ্চগড় জেলা শহরের নিমনগড় এলাকার মতিউর রহমানের স্ত্রী বিউটি আক্তার (২৮) ও তাদের ছেলে মো. মুসা মিয়া (৫)।
এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তারা মারা যান।
মতিউর রহমানের অনলাইন জুয়ার আসক্তি ও সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পারিবারিক কলহের জেরে বিউটি ছেলেকে নিয়ে বিষপান করেন বলে দাবি স্বজনদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মতিউর রহমান।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান-বিউটি আক্তার দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মাইশার বয়স ১১ বছর। আর ছেলে মুসার বয়স ৫ বছর।
মতিউর এক সময় মসজিদে খাদেমধারী করতেন। পরে পঞ্চগড় বাস স্ট্যান্ডে চায়ের দোকান দেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। আসক্ত হয়ে পড়েন জুয়ায়।
এ অবস্থায় সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হত। গত ১১ এপ্রিল মতিউর স্ত্রীকে না জানিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি যান।
সেখান থেকে মোবাইল ফোনে বিউটির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারেন, বিউটি তার ছেলেকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষপান করেছেন। মেয়ে মাইশা পালিয়ে যাওয়ায় তাকে খাওয়াতে পারেননি।
পরে মা-ছেলেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্বজনরা জানান, টাকার অভাবে তাদের ঢাকায় না নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আবার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে মুসা ও এক ঘণ্টা পর মা বিউটি আক্তার মারা যান।
বিউটির বাবা আব্দুল বারেক বলেন, “ওদের পরিবারের অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যা একটাই, মতিউর জুয়া খেলে। কখনো রাতেও বাড়ি ফিরে না। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হত।”
বিউটির মামা খোরশেদ আলম বলেন, “ছেলেটি আগে ভালো ব্যবসা করতো। জুয়া খেলে সব শেষ করে ফেলেছে। তবে কী কারণে বিউটি ছেলেকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে তা আমরা জানি না।”
অভিযোগ অস্বীকার করে মতিউর রহমান বলেন, “আমি ব্যবসায় ৩ লাখ টাকা লোকসান করেছি। সংসারে অভাব, তাই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। পাসপোর্টও করেছি। আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ায় তার সঙ্গে আমার ও আমার শ্যালকের কথা কাটাকাটি হয়। আমার স্ত্রীর রাগ একটু বেশি। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনি আমার স্ত্রী আমার ছেলেকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পান করেছে। টাকা না থাকায় তাদের ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি।”
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী বলেন, “আমরা আত্মহত্যার কারণ জানার চেষ্টা করছি। পরিবারের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”