“দুইদিন ধরি বৃষ্টি হর না, এরপরও পানিটা কমের না। পানি দিয়া আইয়ার-যাইয়ার করতে করতে আর বালা লাগের না।”
Published : 01 Jun 2024, 09:23 PM
সিলেটে বন্যা দুর্গত উপজেলাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও; পানি থমকে আছে মহানগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকাতে।
নগরীকে দুই ভাগে বিভক্ত করা নদীটির দুপাশের ডুবে যাওয়া নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছেও না, কমছেও না। ফলে দুর্ভোগ কাটেনি নগরীর বন্যার্তদের। বরং নগরীর ড্রেনগুলোতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে বেড়েছে ভোগান্তি।
শনিবার বিকালে সরেজমিনে নগরীর তালতলা, সোবাহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, উপশহরের তোরোরতনসহ কয়েকটি ব্লকে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। আর তালতলা এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনেও কয়েকদিন ধরে পানি জমে আছে।
এসব এলাকায় রাস্তায় পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন নগরবাসী। কেউবা বাসাবাড়িতে যেতে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন। এসব এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনে পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা জমে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।
আরও পড়ুন:
মেঘালয়ে কমেছে বৃষ্টি, সিলেটে বন্যার কিছুটা উন্নতি
সিলেট শহরেও বন্যা, জেলায় দুর্গত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ
এদিন বিকাল ৫টার দিকে সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকা থেকে রাস্তার ময়লা পানি মাড়িয়ে নগরীর সোবাহানীঘাট পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলেন মরিয়ম বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “২০২২ সালের বন্যার কথা ভুলতাম পারি না। অখন আমরার পড়াত রাস্তাঘাট ও বাসার সামনেও পানি আইছে, আইজ কয়েকদিন ওই গেছে, কিন্তু পানি কমের না। আমরা এই ময়লা-আর্বজনাযুক্ত পানি দিয়ে চলাচল করিয়ার।”
বৃষ্টি না হলেও পানি কমছে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “গত বুধবার রাত থাকি পানি বাড়ছে, আইজ শনিবার পানি ইলাই আছে। তবে ইবার অখনও পানি না বেশি হওয়ার কারণে বাসা-বাড়িতে উঠছে না। যদি আগের বারকুর মত পানি বাড়ে তাইলে আমরা শেষ, বাঁচতাম না আর।
“দুইদিন ধরি বৃষ্টি হর না, এরপরও পানিটা কমের না। পানি দিয়া আইয়ার-যাইয়ার করতে করতে আর বালা লাগের না।”
নগরীর উপশহর এলাকার ডি ব্লকের বাসিন্দা আমজাদ মিয়া বলেন, “শহরের অন্য পাড়া-মহল্লার চেয়ে নীচু হওয়ার কারণে সুরমা নদীর পানি বাড়লেই আমাদের পাড়ার রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়। পাড়ার কোথাও-কোথাও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। অনেকের বাসার ভেতরেও পানি উঠেছে।
“কয়েকদিন ধরে বাধ্য হয়ে এই ময়লাযুক্ত পানি দিয়ে চলাচল করছি। পানিটা থমকে আছে, কমছে না। এই জল দুর্ভোগ আর ভালো লাগছে না। পানি দিয়ে চলাচল করার পর পা চুলকায়। কি আর করা না গিয়েও তো উপায় নেই।”
আরও পড়ুন:
নতুন এলাকা প্লাবিত, সিলেটে ৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি
সিলেটে বন্যা: সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মীর ছুটি বাতিল
ময়লা-আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রাহমান বলেন, “ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সিটির লোকজন কাজ করছেন। এছাড়া দুর্গন্ধ কমাতে বন্যা আক্রান্ত ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউডারও ছিটানো হবে।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, “নগরীর বন্যা পরিস্থিতি আগের মত আছে। শনিবার সকালে নগরের উপশহর এলাকায় পানি একটু বেড়েছিল। তবে দুপরের দিকে দেখেছি পানি থমকে আছে।”
তিনি আরও জানান, বন্যা মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও নগরীর বন্যার্তরা আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও যাননি।
বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দেওয়া তথ্যে নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার পরিবার। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত সোমবার থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়; আর একই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে আটটি বন্যা আক্রান্ত হয়। প্লাবিত হয়ে সুরমা নদী তীরবর্তী সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলও।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, কানাইঘাট উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সিলেটে পানিবন্দি ৫ লাখের বেশি মানুষ
সিলেটের ৫ উপজেলায় বন্যা, আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ
মোট ৬৮টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের ৭৮১টি গ্রামে বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জন।
তবে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের বার্তায় বলা হয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের জন্য পুরো জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৪২ জন মানুষ আশ্রয়গ্রহণ করেছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসনের বার্তায় জানান হয়েছে।
আরও পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে বেড়েছে সিলেটের নদ-নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত