পুলিশ জানায়, নোয়াখালীর জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের সরকারি আবাসন এলাকায় জেলেদেরকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
Published : 13 Feb 2025, 12:01 AM
‘রাজনৈতিক কারণে’ নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় তিন জেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে ডাকাত সাজিয়ে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরকারীর অনুসারীরা থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সেখান থেকে দুজনকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামে সরকারি আবাসন এলাকায় তিন জেলেকে মারধরের ঘটনা ঘটে বলে হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা জানান।
মারধরের শিকার তিন জেলে হলেন- জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের আলী আজগরের ছেলে ফখরুউদ্দিন (২৫), মো. দিলুর ছেলে মো. শাহারাজ উদ্দিন (২৭) এবং কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. কাউসার (২৭)।
আর বুধবার সন্ধ্যায় থানা ঘেরাওয়ের সময় আটক দুজন হলেন- একই এলাকার রাহাত (২৩) ও সোহেল (২৫)।
তিন জেলেকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় হাতিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।
অভিযোগের বরাতে পুলিশ জানায়, জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাসান মাঝি দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মঙ্গলবার মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফেরেন। তখন তাকে দেখতে যান ফখরুউদ্দিন, শাহারাজ ও কাউসার।
এ খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হন হাসান মাঝির প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন। রাত ১০টার দিকে জসিম উদ্দিনের লোকজন তিন জেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।
এক পর্যায়ে তারা তিন জেলের সামনে জাহাজের ছয়টি সিগন্যাল রকেট রেখে সেগুলোকে ‘রকেট লাঞ্চার’ আখ্যায়িত করে তাদেরকে ডাকাত সাজিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। পরে তাদের থানায় দেওয়া হয়। এসব ঘটনা মোবাইলে ধারণ করে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ তিনজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং ডাকাতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে দুপুরে পুলিশ তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। এরপরই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মারধরের শিকার জেলে মো. কাউসার।
এরপরই সন্ধ্যার দিকে ৫০-৬০ জন নারী এসে থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং দুজনকে আটক করে।
জেলে কাউসারের মা জাহেরা খাতুন বলেন, তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তারা সব সময় নদীতে থাকে। রাতে তাদেরকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।
এ সময় বারবার অনেকের পায়ে ধরেও নিজের ছেলেকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন জাহেরা।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাসান মাঝি বলেন, “এখানে সরকারি ব্যারাকের অনেক মানুষ আমাকে দেখতে এসেছে। এর মধ্যে ব্যারাকে বসবাস করা তিন জেলেকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়।”
এ ঘটনার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জসিম উদ্দিনকে দায়ী করেন হাসান মাঝি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাতে জসিম উদ্দিন মেম্বার বলেন, “হাসান মাঝি হত্যা মামলার আসামি। তারা সেখানে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল। তখন লোকজন ধরে তাদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে।
“তিনজনকে পুলিশ যখন ছেড়ে দিছে তখন নারীরা তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্ষিপ্ত হয়েছে। এ কারণেই তারা থানা ঘেরাও করতে গিয়েছে।”
জসিম উদ্দিন বলেন, “এ ঘটনায় আমি কোনোভাবেই জড়িত না। অযথাই আমাকে এর সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে।”
হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা বলেন, “তিন জেলের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ডাকাতি বা অন্যকোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের কাছে পাওয়া জাহাজের সিগন্যালে ব্যবহৃত সিগন্যাল রকেটকে ‘রকেট লাঞ্চার’ বলে প্রচার করা হয়েছে।
“অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।”