প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে দুই পাড়ের ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে ৯ একর আয়তনের সরকারি খালটি ৩০ একরে পরিণত হয়েছে।
Published : 13 Mar 2025, 01:43 PM
খুলনার কয়রার পবনা খালের দখল নিতে প্রভাবশালীদের দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। হয়েছে মহড়া-পাল্টাপাল্টি মামলা। সংঘর্ষের শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।
কয়রার মহারাজপুরের এই সরকারি খালটি মূলত ছিল ৯ একরের। তবে ২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে শাকবাড়িয়া নদীর পানিতে এলাকাটি প্লাবিত হয়। সে সময় খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিও ভেঙে যায়। ফলে খালটির আয়তন ৩০ একরে পরিণত হয়।
তারপর থেকে খালের ইজারাদাররা খাসজমির সঙ্গে রেকর্ডীয় জমিও ভোগদখল করতে থাকেন। একপর্যায়ে চলতে থাকে দখল-পাল্টা দখল। জমির অধিকার হারান রেকর্ডীয় মালিকরা।
খাল সংলগ্ন পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের রণজিৎ মণ্ডল বলেন, “খালে আমাদের ৬ বিঘা জমি আছে। ১৫ বছর ধরে দখল পাচ্ছি না। আগের ইজারাদার পালিয়ে যাবার পর মনে করেছিলাম জমি দখলে নেব। কিন্তু এখন খালের পাড়ে দুই দলের মহড়া দেখে সাহস পাচ্ছি না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ- এসব বিষয়ে নিয়ে ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
খাল সংলগ্ন মঠবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মওলা বকস বলেন, “ওই খালে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি আছে ৯ একর। নদী ভাঙনের ফলে ২০ একরের বেশি রেকর্ডীয় জমি ওই খালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, এর আগে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাগনে খালটি দখলে রেখে মাছ চাষ করতেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি জমি মালিকদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
“তিনি চলে যাওয়ার পর এখন বিএনপির দুই পক্ষ খালটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।”
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক গ্রামবাসী জানান, গত বছরের অগাস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস এ খালের নিয়ন্ত্রণ নেন। তবে কিছুদিন পরই তাকে হটিয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল খালটি দখল করেন।
পরে প্রশাসন দুইপক্ষকে খাল থেকে উচ্ছেদের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলে দুই মাস সেখানে কাউকে দেখা যায়নি।
তবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে যুবদল নেতা হেলাল ২০-২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে খাল পাড়ে মহড়া দিয়ে চলে যান। পরদিন সকালে তিনি খালটি দখল করেন।
কিন্তু বিকালেই বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাসের লোকজন খাল পাড়ে গিয়ে হেলালের লোকজনকে সরিয়ে দেন।
বর্তমানে খালে দুইপক্ষের কেউ না থাকলেও আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল বলেন, “খালের আগের দখলদার পালিয়ে যাওয়ার পর জমি মালিকদের কাছ থেকে লিখিত চুক্তি করে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম।
“কিন্তু কিছুদিন পর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস আমার লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।”
বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “খালের জমির মালিকরা চান- আমি সেখানে মাছ চাষ করি। একটি পক্ষ ভুয়া মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে খাল দখলে নিতে চাইছে। আমি তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, “বিষয়টি তার জানা নেই। তবে বিএনপির কেউ দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কয়রা থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, “খালের দখল নিয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত থাকতে বলা হয়েছে।”
আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুলি বিশ্বাস বলেন, “পবনা খালের ইজারা নিয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।”