যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করবে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না, হুঁশিয়ারি দেন কমিশনার।
Published : 08 Feb 2025, 07:14 PM
গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান।
হামলার ঘটনায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়ে ওসি মো. আরিফুল ইসলামকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চান মহানগর পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “গতরাত যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমি পুলিশের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতদের প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে গুরুতর আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা শনিবারের বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম।
শনিবার দুপুরে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ী সড়ক অবরোধের সময় সেখানে ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ নেতাকর্মীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা শুক্রবার রাতে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাসভবনের সামনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন।
সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের পাশাপাশি গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবি করা হয়।
দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশের শেষের দিকে সেখানে যান মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সদর থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমি আপনাদের বলতে চাই, আমরা এক এক করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করব। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই, এখানে যারা পুলিশ আছে, রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। আমি শুনেছি, দুই ঘণ্টা পর আমার ওসি আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি আপনাদের এই মুহূর্তে বলতে চাই, আমি তাকে সাসপেন্ড করব। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।
“এতদিনের যে ফ্যাসিবাদী পুলিশ তৈরি হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ থেকে পুলিশকে বের হয়ে আসতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার কষ্ট করে এসেছেন, আপনারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য এসেছেন। যারা গত ১৭ বছর আপনাদের অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছে, এই দেশের ওপর জুলুম করেছে, এখন মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাদের এই মাথাচাড়া কোনোভাবে বরদাস্থ করা হবে না।”
মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান বলেন, “শনিবার রাতে হামলার ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে রাতে চিরুণী অভিযান হবে, এই চিরুণী অভিযানের মাধ্যমে প্রত্যেককে আমরা খুঁজে বের করবো এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ্।”
তিনি নিজে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন দাবি করে বলেন, “ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সময় আমাকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠানো হয়েছিল। আন্দোলনের পর আমি আবার পুলিশ কমিশনার হয়ে ফিরে এসেছি।”
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: গাজীপুরে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন হাসনাত-সার
মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর: গাজীপুরে আহত ৭ জন ঢাকা মেডিকেলে
সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাড়ি ভাঙতে গিয়ে এলাকাবাসীর হামলায় আহত
গাজীপুরে হামলা: হাসপাতালে আহতদের খবর নিলেন সারজিস ও হাসনাত
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ