গ্রেপ্তার রাজিব নিহত বিকাশ সরকারের আপন ভাগনে; তারা যৌথভাবে ব্যবসাও করতেন।
Published : 31 Jan 2024, 07:29 PM
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সন্তানসহ দম্পতি খুনের মামলায় তাদের আত্মীয় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার তৃতীয় তলা থেকে মঙ্গলবার ভোরে বাবা-মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর বিকালেই ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল।
গ্রেপ্তার রাজিব কুমার ভৌমিক (৩৫) উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ভৌমিক ও প্রমিলা রানী ভৌমিকের ছেলে। তিনি হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের আপন ভাগনে।
পুলিশ সুপার আরিফুর বুধবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মঙ্গলবার ভোরে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) এবং তাদের একমাত্র মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিকাশ ওই এলাকার কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে। তারা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। বোনদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। বিকাশের বাসার পাশে তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রকাশ সরকারও পরিবার নিয়ে থাকেন। যদিও দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ওই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার বাসাগুলো ভাড়া দেওয়া।
এ ঘটনায় সন্ধ্যার পর বিকাশ সরকারের স্ত্রীর বড় ভাই সুকোমল চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি রেখে মামলা করেন।
সংবাদ সন্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় বিকাশ সরকারের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। ওই মোবাইল থেকে পাওয়া মামা ও ভাগনের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
“বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে রাজিব তার মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। তখন বিকাশ ব্যবসার পূঁজি হিসাবে ২০ লাখ টাকা দেন। রাজিব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন।
“চলতি বছরে এসে রাজিবের কাছে তার মামা বিকাশ সরকার আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। ২২ জানুয়ারি বিকাশ তার দাবি করা টাকা ৭-৮ দিনের মধ্যে দিতে রাজিবকে চাপ দেন। এ নিয়ে রাজিবের মাকে ফোনে তিনি অনেক বকাবকিও করেন। রাজিব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন এবং খুনের পরিকল্পনা করেন।
“শনিবার বিকালে রাজিব তার মামাকে ফোন দিয়ে টাকা দিতে বাসায় যেতে চান। এ সময় বিকাশ বাসার বাইরে ছিলেন। তিনি রাজিবকে তাড়াশের বাসায় গিয়ে মামীর সঙ্গে (স্বর্ণা সরকার) দেখা করতে বলেন।
“রাজিব বাসায় যাওয়ার পর একপর্যায়ে তার মামী নিচের দোকানে যান। তখন রাজিব লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোন পারমিতার মাথায় আঘাত করেন। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
“মামী দোকান থেকে ফিরলে তাকেও কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে রাজিব। কিছুক্ষণ পর মামা বিকাশ সরকার বাসায় ঢুকলে তাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। এরপর লাশগুলো বেডরুমে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে উল্লাপাড়ায় চলে যান রাজিব।”
পুলিশ সুপার বলেন, “মোবাইল থেকে পাওয়া মামা-ভাগনের কথোপকথনের সূত্র ধরে রাজিবকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সবকিছু বলেন।
সিরাজগঞ্জে সন্তানসহ দম্পতি খুনের ঘটনায় মামলা
সিরাজগঞ্জে তালাবদ্ধ বাসায় স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ের গলাকাটা লাশ
সন্তানসহ দম্পতি খুন: কিছুই বুঝতে পারছে না পরিবার
“পরে রাজিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড একটি পুকুর থেকে এবং রক্তমাখা হাসুয়াটি তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।”
বিকালে রাজিবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকালে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাড়াশ উপজেলা সদরের চালা মাগুড়া শ্মশানে সন্ধ্যায় তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।