মুক্তাগাছার অটোরিকশা চালক শামীম মিয়াকে হত্যার ঘটনায় প্রতিবেশী রাকিবুল ইসলামকে (২৩) আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
Published : 21 Jan 2024, 07:16 PM
ময়মনসিংহে ছয়দিনের ব্যবধানে তিনজন অটোরিকশা চালক খুন হয়েছেন। এতে চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সভাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ও রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও সদর উপজেলায় দুই অটোচালকের লাশ উদ্ধারের পর শনিবার মুক্তাগাছায় আরেক অটোরিকশা চালকের লাশ পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ নগরীতে ইজিবাইক চালক হোসেন মিয়া বলেন, “একের পর এক হত্যায় সাধারণ চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ করে রাতে অটোরিকশা চলাচলে অপরিচিত লোকজনকে নিয়ে কোথাও যাই না।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছর ঈদের রাতে নগরীতে দুইজন চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সম্প্রতি তা বেড়েছে।”
ময়মনসিংহ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, “অটোরিকশার চালকদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। আর এরাই টার্গেটে পরিণত হয়। অটোরিকশা চালালেও এদের কোনো সংগঠন নেই যারা কাউন্সেলিং করবে। এতিমের মতো চলার কারণে অটোর ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলো বেশি হচ্ছে।”
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন বলেন, থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে অটোরিকশা ও ভ্যানচালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করতে।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর কিষ্টপুর, চর ইশ্বরদিয়া, রহমতপুর, খাগদহর এলাকায় সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। এছাড়া অটোরিকশা ও ভ্যান চালকদের ডেকে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “চালকরা বেশি ভাড়ার লোভে রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঘটনাগুলো ঘটে। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মহাসড়কে রাত ১২টার পর কোনো অটোরিকশা চালাতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
“অসময়ে কেউ যেন ভাড়া নিয়ে না যায়, রাত ১২টার পর কোনো যাত্রী নিতে হলে তাকে চিনে রাখা, ছবি তুলে কাউকে পাঠিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে। এতে অপরাধীরা এ ধরনের কাজের সাহস পাবে না।”
এদিকে শনিবার মুক্তাগাছায় অটোরিকশা চালক হত্যার ঘটনায় এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
রোববার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন।
তিনি জানান, শনিবার সকালে মুক্তাগাছার তারাটি ইউনিয়নের বিরাশী গ্রামে একটি পতিত জমি থেকে অটোরিকশা চালক শামীম মিয়ার (১৬) লাশ উদ্ধার করা হয়। শ্বাসরোধে হত্যার পর স্থানীয় মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর এই ছাত্রের লাশ ফসলি জমিতে ফেলা যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলা ডিবি অভিযান চালিয়ে ফকিরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে শামীমের প্রতিবেশী রাকিবুল ইসলামকে (২৩) আটক করে। তিনি তারাটি চরপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, শামীমের একটি মোবাইল ফোন কেনার শখ ছিল। সে বিষয়টি ভ্যানচালক রাকিবুলের সঙ্গে আলাপ করে। তখন শামীমের ভাড়ায় চালিত অটোরিকশাটি বিক্রির পরিকল্পনা করে রাকিবুল। মালিককে বুঝানোর কথাছিল অটোরিকশাটি হারিয়ে গেছে। রাকিবুল নিজেও এনজিওর ঋণ নিয়ে চাপে থাকায় সেই টাকা ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
পরে শুক্রবার দিনভর অটোরিকশা চালায় শামীম। পরে তারা জামালপুরের নরুন্দি এলাকায় গিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কাছে ১০ হাজার টাকায় অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেয়। সেই টাকা থেকে শামীম মাত্র দুই হাজার টাকা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাকিব।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার বাগান এলাকার কলাবাগান থেকে রাকিব মিয়া (১৪) নামে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাকিব উপজেলার সদর ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার ছেলে।
ভালুকা উপজেলার মেজরভিটা এলাকা থেকে ভাড়া নিয়ে বের হয়ে হত্যার শিকার হন রাকিব। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া ১৬ জানুয়ারি রাতে সদর উপজেলার গোপালনগর মধ্যপাড়া এলাকায় চালক নাজিম উদ্দিনকে (৪০) হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে যাত্রীবেশে একটি দল।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাজিম ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন:
ময়মনসিংহে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩