বগুড়ার ধুনটে সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
Published : 13 Oct 2024, 11:07 PM
শারদীয় দুর্গাপূজার দশমীতে বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল এক দিনের ‘বউ মেলা’। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলার ছিল নারী-শিশুসহ সব বয়সীদের উপচে পড়া ভিড়।
মেলায় বিক্রেতার মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিলেন নারী। মেলায় পুরুষ ক্রেতার প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। এ কারণে মেলাটি ‘বউ মেলা’ হিসাবে পরিচিত। মেলায় কেবল পূজার ধর্মীয় অনুসঙ্গই নয়, মেলা যেন হয়ে ওঠে এক সার্বজনীন বিনোদনের কেন্দ্র।
রোববার সকাল থেকে মেলায় বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী-পুরুষ ব্যবসায়ীরা। মেলায় ছিল মিষ্টান্ন, হরেক রকম শিশুতোষ খেলনা, চুরি, কানের দুল, ফিতা, আলতা, মাটির তৈরি পাতিল, কলস, বাঁশের তৈরি নানা সামগ্রী ও গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র।
মেলায় চিনি ও গুড়ের জিলাপি ভাজাসহ নানা রকমের মিষ্টি কেনাকাটায় ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। এ ছাড়া মেলায় আগত সব বয়সী নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। মেলা এলাকায় সজাগ ছিলেন আয়োজক কমিটির লোকজন ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
মেলায় আগত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখীর সানজিদা বলেন, এটা শুধু পূজা উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা নয়। মেলাটি সার্বজনীন। মেলায় নারীদের প্রসাধনী সামগ্রী ইচ্ছেমতো ক্রয় করা যায়। প্রতি বছর কেনাকাটার জন্য তিনি এ মেলায় আসেন।
ধুনটের চৌকিবাড়ির অরুনা রায় বলেন, “প্রতি বছরই মেলায় আসি। কেনাকাটা করি। দেখা হয় অনেক বান্ধবীর সঙ্গে। মেলায় কেনাকাটাও হয় আর বান্ধবীদের সঙ্গেও দেখা হয়।”
মেলায় দোকান দিয়েছেন শেরপুর উপজেলার বাসিন্দা চন্দনা। তিনি বলেন, “প্রতি বছরই মেলায় আসি। বিক্রি হয় অনেক। মেলার পরিবেশ ভালো।”
আরেক দোকানি চর ধুনটের ফুলরানী জানান, মেলায় শিশুদের জিনিসপত্র বিক্রি হয় বেশি। এই মেলার জন্য তারা একটি বছর অপেক্ষায় থাকেন।
সরকার পাড়ার আইনজীবী উত্তম কুমার জানান, মেলার ঐতিহ্য অনেক পুরানো। শহরে বসবাস করলেও পূজায় ‘বউ মেলায়’ কেনাকাটা করার জন্য তার স্ত্রী-সন্তানরা পাগল হয়ে থাকেন। তাই পূজায় গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি।
তার মত অনেকেই যারা বাইরে থাকেন, তারাও ‘বউ মেলা’ উপভোগ করতে গ্রামের চলে আসেন বলে জানান উত্তম কুমার।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দেব ও সাধারণ সম্পাদক লালন সরকার জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে একশ বছরের বেশি সময় ধরে একদিনের জন্য বসানো হয় এই মেলা। প্রতি বছর দূরদূরান্তের মানুষ এই মেলায় আনন্দ উপভোগ করতে আসেন। এ বছরও তার কোনো কমতি ছিল না।
সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয় বলে জানান তারা।
ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বসা এ মেলায় আগে থেকেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল।